ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর কিছু মুজিযাহ
ইমাম রেজা (আ.)-এর শাহাদতের পর আশি জন জ্ঞানী এবং ফকীহ বাগদাদ ও অন্যান্য শহর থেকে হজ্বব্রত পালন করার জন্য মক্কায় আসেন। মক্কা যাওয়ার পথে ইমাম জাওয়াদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য তারা মদীনায় প্রবেশ করেন এবং ইমাম সাদিক (আ.)-এর বৈঠক খানা যেহেতু খালি ছিল সেখানে গেলেন। বালক ইমাম জাওয়াদ (আ.) তাদের মাঝে উপস্থিত হন। মুয়াফফাক নামে এক ব্যক্তি ইমামকে উপস্থিত সকলের মাঝে পরিচয় করিয়ে দেন। সকলে ইমামের সম্মানে উঠে দাঁড়ান এবং সালাম বিনিময় করেন। অতঃপর তারা ইমামকে প্রশ্ন করলেন : ইমাম জাওয়াদ যথাযথ ভাবে তাদের প্রশ্নের জবাব দিলেন। সকলে এই মহামানবের মধ্যে ইমামতের নিদর্শন স্পষ্ট দেখতে ফেলেন এবং তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হলো। তারা খুব খুশী হলেন এবং ইমামের প্রশংসা ও তাঁর জন্য দোয়া করলেন ।
১. ইসহাক নামে এক ব্যক্তি বলেন ,আমিও ইমামের কাছে প্রশ্ন করার জন্য একটি কাগজে দশটি প্রশ্ন লিখে রেখেছিলাম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলাম যে ,ইমাম যদি আমার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেন ,তাহলে আমার জন্য দোয়া করার অনুরোধ জানাব। বলব আমার স্ত্রী অন্তসত্তা ,আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন ঐ সন্তান ,পুত্র সন্তান হয়। সভা দীর্ঘায়িত হতে দেখে চিন্তা করলাম আজ না হয় থাক ,কাল এসে প্রশ্নগুলি ইমামকে নিবেদন করব। ইমাম (আ.) আমাকে উঠতে দেখে বললেন ,‘ হে ইসহাক ,আল্লাহ্ আমার দোয়া কবুল করেছেন ,তোমার একটি পুত্র সন্তান হবে ,তার নাম রেখ আহমাদ। ’ আল্লাহর শোকর আদায় করে বললাম নিঃসন্দেহে ইনিই (ইমাম জাওয়াদ) হচ্ছেন পৃথিবীর বুকে আল্লাহর হুজ্জাত বা স্পষ্ট দলিল।
ইসহাক দেশে ফিরে গেল। আল্লাহ্ তাকে একটি সুন্দর পুত্র সন্তান দান করলেন। ইসহাক ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর নির্দেশানুসারে ছেলেটির নাম আহমাদ রাখল। (উয়ুনুল মুজিযাত ,পৃ. ১০৯)
২. ইমরান ইবনে মুহাম্মদ আশয়ারী বলেন ,ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর নিকটে গেলাম। আমার কাজ শেষে ইমামকে বললাম : উম্মুল হাসান আপনাকে সালাম জানিয়েছে এবং তার কাফনের জন্য আপনার একটা পোশাক চেয়েছে। ইমাম এরশাদ করলেন : তার জন্য এটার আর প্রয়োজন নেই।
আমি চলে গেলাম কিন্তু ইমামের এ কথার অর্থ বুঝতে পারলাম না। দেশে ফিরে জানতে পারলাম যে ,আমি ইমামের সান্নিধ্যে পৌঁছানোর ১৩-১৪ দিন পূর্বেই উম্মুল হাসান মারা গিয়েছে।
৩. আহমদ ইবনে হাদীদ বলেন ,আমরা একদল হজ্বব্রত পালন করতে মক্কায় যাচ্ছিলাম ,পথিমধ্যে ডাকাতরা আমাদের পথ রোধ করে সমস্ত মালপত্র ছিনিয়ে নিয়ে গেল। মদীনায় পৌঁছে ইমাম জাওয়াদের সাথে সাক্ষাৎ করে ,ঘটনা খুলে বললাম। ইমাম জাওয়াদ (আ.) আমাদেরকে টাকা-পয়সা ও পোশাক-পরিচ্ছদ দান করলেন এবং বললেন : তোমাদের যার যে পরিমাণ অর্থ ডাকাতি হয়েছে সকলে সে পরিমাণে এ থেকে ভাগ করে নাও। ভাগ করে দেখা গেল ,ডাকাতরা যে পরিমাণ অর্থ আমাদের কাছ থেকে ডাকাতি করেছিল ,ইমাম জাওয়াদ (আ.) ঠিক সেই পরিমাণ অর্থ আমাদেরকে দান করেছিলেন ,তা অপেক্ষা কমও নয় বা বেশিও নয় (বিহারুল আনওয়ার ,৫০তম খণ্ড ,পৃ. ৪৩) ।
৪. মুহাম্মদ ইবনে সাহল কুমী বলেন : মক্কায় সর্বস্ব হারিয়ে মদীনায় ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর নিকটে গেলাম। মনে করেছিলাম ইমামের কাছে পরিচ্ছদ প্রার্থনা করব কিন্তু তার পূর্বেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে ,আমার আবেদন কাগজে লিখে জানাব এবং তাই করলাম। অতঃপর মসজিদে নববীতে গিয়ে স্থির করলাম দু ’ রাকাত নামাজ পড়ব এবং শতবার আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করব। যদি আমার অন্তর চিঠিটা ইমামের কাছে দিতে বলে তবে তাই করব আর যদি অন্তর সায় না দেয় তবে ছিঁড়ে ফেলব। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। কিন্তু আমার অন্তর বলল চিঠিটা না দিতে। তাই চিঠিটি ছিঁড়ে ফেলে মক্কা অভিমুখে যাত্রা শুরু করলাম। কিছুদুর না যেতেই দেখতে পেলাম ,এক ব্যক্তি রুমালে মুড়িয়ে কিছু পোশাক নিয়ে কাফেলার মধ্যে আমাকে খুঁজছিল। আমার কাছে পৌঁছে পোশাকগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,‘ তোমার মাওলা (ইমাম জাওয়াদ) এ পরিচ্ছদগুলো তোমার জন্য পাঠিয়েছেন ’ (খারায়েজে রাভান্দি ,পৃ. ২৩৭ ;বিহারুল আনওয়ার ,৫০তম খণ্ড ,পৃ. ৪৪) ।
৫. বৃক্ষটি ফলবান হওয়া : মামুন ,ইমাম জাওয়াদকে মদীনা থেকে বাগদাদে নিয়ে আসল এবং ইমামের সাথে তার কন্যাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করল। কিন্তু ইমাম বাগদাদে না থেকে স্ত্রীকে নিয়ে মদীনায় ফিরে আসলেন।
ফেরার পথে জনগণ ইমামকে বিদায় জানাতে শহরের শেষ পর্যন্ত এসেছিল। মাগরিবের নামাজের সময় ইমাম এক মহল্লায় পৌঁছান ,সেখানে একটি পুরাতন মসজিদ ছিল। নামাজ পড়ার জন্য তিনি সেখানে গেলেন। মসজিদের আঙ্গিনায় একটি কুল গাছ ছিল কিন্তু তাতে কখনো ফল হতো না। ইমাম জাওয়াদ ওজুর পানি চাইলেন এবং ঐ বৃক্ষের গোড়ায় ওজু করলেন। জামায়াতবদ্ধভাবে হয়ে নামাজ পড়েলেন। অতঃপর চার রাকাত নফল নামাজ পড়ে সেজদাবনত হয়ে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। অতঃপর জনগণের কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। পরের দিন সকালে দেখা গেল গাছটিতে ফুল ধরেছে এবং কিছুদিন পর গাছটি ফলে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। জনগণ এ দৃশ্য দেখে খুবই আশ্চর্যান্বিত হলো (নূরুল আবসার শাবলানজী ,পৃ. ১৭৯ ;ইহকাকুল হাক ,১২তম খণ্ড ,পৃ. ৪২৪) । শেখ মুফিদ ও এ গাছটি দেখে ছিলেন এবং তার ফলও খেয়েছিলেন।
