ইমাম মাহদি (আ.ফ.) আমাদের থেকে কী প্রত্যাশা করেন?

by Syed Yesin Mehedi

ইমাম মাহদি (আ.ফ.) নিস্ক্রিয় অনুসারী চান না.. তিনি চান এমন নিষ্ঠাবান যোদ্ধা, যারা ঈমানের জন্য নিবেদিত। প্রকৃত শিয়া কেবল আহলুল বাইত (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা দাবি করে না, বরং তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করে। মাহদাভী পথ দুর্বলচিত্তদের জন্য নয়; এটি আত্মত্যাগ, দৃঢ়তা এবং সম্পূর্ণ আনুগত্যের পথ। ইমামের প্রকৃত অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে—নিজের সময়, সম্পদ, শক্তি, এবং প্রয়োজনে নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে… সত্যের পথে।

ইমাম (আ.ফ.) চান, তুমি আত্মায় হুসাইনি হও এবং কাজে জয়নাবি হও। ইমাম হুসাইন (আ.) একা বিপ্লব করেননি; তাঁকে সহায়তা করেছিলেন তাঁরা, যারা সত্যের জন্য জীবন দিয়েছিলেন। একইভাবে, বিবি জয়নাব (সা.) কারবালার বার্তা ইতিহাসের ধুলোয় বিলীন হতে দেননি। তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন, কথা বলেছেন, স্পষ্ট করেছেন, এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে লড়েছেন। যদি তুমি ইমাম মাহদির (আ.ফ.) জন্য অপেক্ষা করো, তবে তোমাকেও মিথ্যার বিরুদ্ধে এমনই দৃঢ় হতে হবে, সত্য স্পষ্টকরণের (তাবইয়িন) জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে, এবং যেকোনো জালিমের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।

একজন মাহদাভী হতে হলে, তোমার হৃদয়ে যে-কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে যন্ত্রণা অনুভব করতে হবে। এর মানে হলো, তুমি কখনো জুলুম দেখে চুপ করে থাকতে পারবে না। সেটা হোক তোমার ঘরে, সমাজে, বা পুরো বিশ্বে—তোমাকে অবশ্যই সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিতে হবে। আজকের বিশ্ব মিথ্যা, দুর্নীতি, এবং এমন এক ব্যবস্থায় ভরে গেছে, যা মানুষকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। যদি তুমি সত্যিই ইমামের (আ.ফ.) পথের অনুসারী হও, তাহলে তোমাকে এই ভ্রান্তিগুলো উন্মোচিত করতে হবে এবং মানুষের হৃদয়কে আল্লাহর ন্যায়বিচারের প্রতি জাগ্রত করতে হবে।

ইমাম (আ.ফ.) চান, তুমি নিজেকে পবিত্র করো—ভিতরে ও বাইরে উভয়দিক থেকে। তুমি কখনোই আল্লাহর (সুবঃ) সর্বোচ্চ প্রতিনিধি হওয়ার দাবি করতে পারো না, যদি তোমার হৃদয় অহংকার, হিংসা, অলসতা, বা পার্থিব মোহে ভরা থাকে। ইমাম মাহদির (আ.ফ.) প্রকৃত সৈনিকরা তাদের আত্মাকে শুদ্ধ করেছে, চরিত্রকে উন্নত করেছে, এবং প্রতিটি শ্বাসে তাকওয়ার (আল্লাহ-সচেতনতা) সঙ্গে জীবনযাপন করে। আখেরি যুগের যুদ্ধ শুধু শারীরিক নয়… এটি আত্মিকও। যদি আমরা আমাদের ইবাদতে শৃঙ্খলাবদ্ধ না হই, আমাদের কাজে আন্তরিক না হই, এবং আমাদের নীতিতে অবিচল না থাকি, তাহলে আমরা তাঁর নির্বাচিতদের মধ্যে থাকতে পারব না।

ইমাম (আ.ফ.) খোঁজেন এমন পুরুষ ও নারী, যারা প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ভয় পায় না। আজকের দুনিয়া মিথ্যা কথামালায় ভরা—ইসলাম সম্পর্কে বিকৃত ধারণা, ইতিহাসের চেহারা বদলে দেওয়া, এবং সমাজ থেকে আল্লাহকে (সুবঃ) মুছে ফেলার অপচেষ্টা। একজন সত্যিকারের মাহদাভী কখনো এ ধরনের মিথ্যাকে নীরবে মেনে নেয় না। তোমাকে হতে হবে সত্যের কণ্ঠস্বর, শুদ্ধ মোহাম্মদী (সা.) বার্তার বাহক, এমন একজন ব্যক্তি, যে বিভ্রান্তি ও প্রতারণার শিকড় গজাতে দেয় না। হোক সেটা বক্তৃতার মাধ্যমে, লেখালেখির মাধ্যমে, সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে, বা তোমার নাগালের মধ্যে থাকা যেকোনো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে—তোমাকে সত্য স্পষ্ট করতে হবে, মিথ্যাকে উন্মোচিত করতে হবে, এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে।

এটি অলসতার সময় নয়। ইসলামের শত্রুরা দিন-রাত বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে লিপ্ত, আর যদি তুমি সত্যিই ইমামের (আ.ফ.) জন্য অপেক্ষা করো, তবে তোমাকেও তাঁর লক্ষ্যে অবিচলভাবে কাজ করতে হবে। তোমার দিন-রাত ইমামের প্রস্তুতির জন্য উৎসর্গিত হওয়া উচিত—জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে, দৃঢ়তা ও কর্মশক্তির মাধ্যমে, এবং অবিচল ঈমানের মাধ্যমে। তোমাকে নিজের, পরিবারের, ও সমাজের শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে প্রতিটি উপায়ে। কুরআন, ফিকহ, ও হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে তোমার বুদ্ধিমত্তাকে শক্তিশালী করো, শারীরিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করো আসন্ন চ্যালেঞ্জগুলোর জন্য, এবং মানসিকভাবে এত দৃঢ় হও যাতে কোনো প্রচার বা চাপ তোমার ঈমানকে নড়বড়ে করতে না পারে।

একজন প্রকৃত মাহদাভী অনুসারী কেবল তাঁর প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করে না, বরং তাঁর শাসনের ভিত্তি স্থাপনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। যখন তিনি আত্মপ্রকাশ করবেন, তখন তাঁকে কেবল সেই লোকদের প্রয়োজন হবে না, যারা কেবল তাঁর আগমনের প্রত্যাশা করেছিল… বরং যাঁরা ইতিমধ্যেই তাঁর ন্যায়বিচারের জন্য ময়দান প্রস্তুত করেছে।

তুমি নিজেকে প্রশ্ন করো: যদি ইমাম (আ.ফ.) আজ আত্মপ্রকাশ করেন, তাহলে কি তিনি তোমাকে প্রস্তুত দেখতে পাবেন? তিনি কি তোমার মধ্যে একজন যোদ্ধার চিহ্ন দেখবেন, নাকি একজন দর্শকের? তিনি কি তোমার হৃদয়ে কারবালার মিশনের স্পন্দন অনুভব করবেন, নাকি দুনিয়ার প্রলোভনে নিমজ্জিত এক মন দেখতে পাবেন?

ইমাম মাহদির (আ.ফ.) প্রতি আনুগত্য শুধু নামাজ ও দোয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি তাঁর লক্ষ্যের প্রতিফলন তোমার জীবনের প্রতিটি দিকেই থাকতে হবে। এটি অন্যায়কে প্রত্যাখ্যান করা, নিপীড়িতদের উঁচু করা, এবং যেখানেই থাকো না কেন, সেখানে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা। এটি এমন একটি সমাজ গড়ে তোলার প্রক্রিয়া, যা তাঁর আনিত ন্যায়বিচারের প্রতিফলন হবে। তোমার জীবন হওয়া উচিত তাঁর আগমনের জন্য তোমার প্রস্তুতির প্রমাণ। তোমার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি মুহূর্ত সাক্ষ্য দিক যে তুমি ইতিমধ্যেই তাঁর বিপ্লবের পথে চলতে শুরু করেছ।

ইমাম (আ.ফ.) চান, তুমি তাঁর মিশনে সম্পূর্ণ বিশ্বাসী হও। যেন সংকট আসলেও তুমি দ্বিধান্বিত না হও। ইমামের গায়বাতের যুগ একটি পরীক্ষা… কেবল দৃঢ় ঈমানের অধিকারীরাই স্থির থাকবে। বিভ্রান্তির এই যুগে, তোমার সত্যের প্রতি আনুগত্য, পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইত (আ.)-এর প্রতি অবিচল বিশ্বাসই তোমাকে তাঁর বাহিনীর যোগ্য করে তুলবে। ইসলামের শত্রুরা শত শত বছর ধরে মাহদাভী আন্দোলনকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, কিন্তু তারা কখনো সত্যিকারের মুমিনদের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে পারেনি। সেই কণ্ঠস্বরের অংশ হও। এমন এক শক্তি হও, যা তাঁর বার্তাকে দৃঢ়তা ও স্পষ্টতার সঙ্গে বহন করবে।

যদি তুমি ইমাম মাহদির (আ.ফ.) সৈনিকদের মধ্যে থাকতে চাও, তাহলে তোমাকে অন্ধকারে আলোর বাতিঘর হতে হবে। তোমাকে আশেপাশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে হবে, যারা গাফেল হয়ে আছে তাদের জাগাতে হবে, এবং যারা বস্তুবাদে ডুবে আছে তাদের অন্তরে বিপ্লবের আগুন প্রজ্বলিত করতে হবে। মাহদাভী আন্দোলন শুধু ইমামের অপেক্ষার জন্য নয়; এটি এমন এক জাতি গঠনের জন্য, যা তাঁর আগমনের পূর্বেই ন্যায়বিচারের জন্য প্রস্তুত থাকবে। তুমি শুধু তাঁর অনুসারী নও… তুমি এই বিশ্বে তাঁর প্রতিনিধি, যতক্ষণ না তিনি ফিরে আসেন।

তাহলে জাগো। নিজেকে পরিশুদ্ধ করো। ঈমানকে দৃঢ় করো। জ্ঞানের তীক্ষ্ণতা বাড়াও। মিথ্যার বিরুদ্ধে ভয়হীন হও। প্রতিটি শ্বাসে মাহদাভী মিশনকে জীবন্ত রাখো। এবং যখন তিনি ফিরে আসবেন, তখন যেন তিনি তোমাকে ইতিমধ্যেই তাঁর লক্ষ্যের জন্য লড়াইরত দেখতে পান—তাঁর পাশে দাঁড়ানো এক সৈনিক, যিনি চূড়ান্ত ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে চলেছেন।

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?