ইসলামী নৈতিকতা (আখলাক)-এর প্রধান স্তম্ভগুলোর মধ্যে একটি হলো কৃতজ্ঞতা । কৃতজ্ঞতা হলো আল্লাহর দেওয়া সকল নেয়ামতের (আশীর্বাদ) জন্য অন্তর দিয়ে তাঁর প্রশংসা করা এবং সেই নেয়ামতগুলোকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যবহার করা। কৃতজ্ঞতা শুধু একটি আবেগ নয়, বরং এটি একটি ইবাদত, যা মানুষের আধ্যাত্মিক জীবনকে পরিশুদ্ধ করে। কৃতজ্ঞতার বিপরীত হলো অকৃতজ্ঞতা যা নেয়ামত কেড়ে নেওয়ার কারণ হতে পারে।
আহলে বাইত (আঃ)-এর জীবন ও শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, জীবনের সকল পরিস্থিতিতে কীভাবে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে হয়।
কুরআন শরীফে কৃতজ্ঞতার আহ্বান
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বহুবার মুমিনদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীকে পুরস্কৃত করার অঙ্গীকার করেছেন:
“সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।”— সূরা আল-বাকারা (২:১৫২)
অন্যত্র আল্লাহ স্পষ্ট করেছেন যে, কৃতজ্ঞতা নেয়ামত বৃদ্ধির কারণ:
“যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব; আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।”— সূরা ইবরাহীম (১৪:৭)
এই আয়াতটি মুমিনদের জন্য এক সুস্পষ্ট বার্তা: আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নেয়ামতের জন্য শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য।
রাসূল (সাঃ)-এর হাদীসে কৃতজ্ঞতার উদাহরণ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রাতে এত বেশি নফল সালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পা মুবারক ফুলে যেত। যখন তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করা হলো, তিনি বললেন: “আমি কি আল্লাহর একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?”
এই হাদীসটি প্রমাণ করে যে, কৃতজ্ঞতা শুধু মুখে বলার বিষয় নয়, বরং তা আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়।
আহলে বাইত (আঃ)-এর শিক্ষায় কৃতজ্ঞতার গভীরতা
আহলে বাইত (আঃ)-এর ইমামগণ শিখিয়েছেন যে, কৃতজ্ঞতা কেবল সুখের সময়ে নয়, বরং কঠিন পরিস্থিতিতেও প্রকাশ করা উচিত। চতুর্থ ইমাম জয়নুল আবেদীন (আঃ)-এর ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া’ হলো কৃতজ্ঞতার দোয়ায় পরিপূর্ণ। সেখানে তিনি আল্লাহর প্রতি তাঁর অসংখ্য নেয়ামতের জন্য এমনভাবে শুকরিয়া আদায় করেছেন, যা প্রতিটি মুমিনের জন্য শিক্ষণীয়।
ইমাম (আঃ)-এর একটি দোয়া: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল বিষয়ে এবং সকল অবস্থায় আমার প্রতি কৃতজ্ঞতার দাবিদার।”— [উৎস: সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া (সংক্ষিপ্ত)]
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন:
“যখন নেয়ামত এসে পৌঁছায়, তখন শুকরিয়া না করলে তা হাতছাড়া হয়ে যায়, আর শুকরিয়া আদায় করলে তা স্থায়ী হয়।”
কৃতজ্ঞতা হলো মুমিনের হৃদয়ের এক পবিত্র অবস্থা। এটি আমাদের জীবনকে হতাশামুক্ত করে এবং আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে আরও মজবুত করে। আহলে বাইত (আঃ)-এর দেখানো পথে, আমরা যখন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব, তখন আল্লাহ আমাদের নেয়ামত কেবল বাড়িয়েই দেবেন না, বরং আমাদের অন্তরকেও প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেবেন।
সংকলন : ইয়াসিন মেহদী (ইফাজ)
