জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব

 এবং ইমাম আলী (আঃ)-এর দৃষ্টিতে 'ইলম' ও 'আমল'-এর সম্পর্ক

by Syed Yesin Mehedi

 ইসলাম একটি ধর্ম যা জ্ঞান বা ‘ইলম’-কে মানবজীবনের মূল ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। পবিত্র কুরআনের প্রথম বাণীটিই ছিল ‘ইক্বরা’ বা ‘পড়ো’; এটি প্রমাণ করে যে, মানবজাতির আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় প্রকার সাফল্যের জন্য জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য। জ্ঞান অর্জন করা কেবল ব্যক্তিগত উন্নতি নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইসলামী দর্শনে, জ্ঞান অর্জনকে কখনো কখনো ইবাদতের চেয়েও উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

আহলে বাইত (আঃ)-এর মধ্যে আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ) ছিলেন জ্ঞানের এক বিশাল সমুদ্র। রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষার মূল ধারক ও বাহক হিসেবে তাঁর বাণীগুলোতে জ্ঞান ও তার ব্যবহার অর্থাৎ কর্ম (আমল)-এর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং শিক্ষণীয়।
কুরআন ও সুন্নাহতে জ্ঞানের গুরুত্ব
 মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে জ্ঞানীদের মর্যাদা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক উঁচুতে রেখেছেন:

“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন।”— সূরা আল-মুজাদালাহ (৫৮:১১)
অন্যদিকে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সকল মুসলমানের জন্য জ্ঞান অর্জনকে একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করেছেন:
“জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উপর ফরয।”-ইবনে মাজাহ, হাদীস নং: ২২৪
এই হাদীসটি স্পষ্ট করে যে, নিজের দ্বীন ও দুনিয়ার জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুমিনের জন্য ইবাদতেরই অংশ।
ইমাম আলী (আঃ)-এর দৃষ্টিতে ইলম ও আমল
 
হযরত আলী (আঃ) শিখিয়েছেন যে, জ্ঞান হলো আলোর মতো, যা ছাড়া মানুষ সঠিক পথ দেখতে পায় না। তবে শুধু জ্ঞান যথেষ্ট নয়, জ্ঞানকে অবশ্যই কর্মে পরিণত করতে হবে। তিনি জ্ঞান ও আমলকে এমনভাবে যুক্ত করেছেন:

“যার জ্ঞান নেই, তার কোনো কাজ নেই; এবং যার কাজ নেই, তার কোনো জ্ঞান নেই।”

এটি বোঝায় যে: ১. জ্ঞান ছাড়া আমল: সঠিক জ্ঞান ছাড়া ইবাদত বা কর্ম ভুল পথে চলে যেতে পারে এবং আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।

২. আমল ছাড়া জ্ঞান: শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন করে তা ব্যবহার না করলে তা বন্ধ্যা জমির মতো, যেখানে কোনো ফল ফলে না। জ্ঞান কেবল তখন মূল্যবান হয় যখন তা মানুষের চরিত্র সংশোধন এবং সমাজের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।

আমীরুল মুমিনীন আরও বলেছেন:
“জ্ঞান হলো আমলের পথপ্রদর্শক, আর আমল হলো জ্ঞানের উদ্দেশ্য।”—  নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাবাণী: ৩৬৬ (ভাবানুবাদ)]
ইসলামে জ্ঞান কেবল তথ্য বা তত্ত্বে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি হলো জীবন পরিচালনার এক আলোকবর্তিকা। আহলে বাইত (আঃ)-এর শিক্ষা অনুযায়ী, একজন মুমিনের জ্ঞান তখনই পূর্ণতা লাভ করে যখন সে তার অর্জিত জ্ঞানকে আন্তরিকভাবে আল্লাহর নির্দেশিত পথে কাজে লাগায়। সুতরাং, জ্ঞান অর্জন এবং সেই অনুযায়ী সৎকর্ম করা—এই দুটিই মুমিনের সফলতার মূলমন্ত্র।

  ফজর/ ইয়াসিন মেহদী ( ইফাজ )

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?