ধৈর্য (সবর): মুমিনের সফলতার চাবিকাঠি ও ইমামদের (আঃ) জীবনদর্শন

by Syed Yesin Mehedi

ইসলামী নৈতিকতা (আখলাক)-এর ভিত্তি হিসেবে যে গুণটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো ‘সবর’ বা ধৈর্য। ধৈর্য শুধু বিপদ-আপদে নীরবে সহ্য করার নাম নয়, বরং এটি একটি ব্যাপক মানসিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন যা মুমিনকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আনুগত্যে অবিচল থাকতে শেখায়। সবর এমন একটি শক্তি যা মানুষকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে দৃঢ় রাখে, পাপ থেকে বিরত রাখে এবং কষ্টের সময় হতাশ হতে দেয় না।

কুরআন শরীফের দৃষ্টিতে ধৈর্যের স্থান
 
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে মুমিনদেরকে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং ধৈর্যশীলদের জন্য মহাপুরস্কারের ঘোষণা করেছেন। সবরকে ইবাদতের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে দেখা হয়েছে:

“হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে (আল্লাহর কাছে) সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।”— সূরা আল-বাকারা (২:১৫৩)
এই আয়াতটি আমাদের শেখায় যে, সবর এবং সালাত (নামাজ) হলো আল্লাহর সাহায্য লাভের দুটি প্রধান মাধ্যম। আল্লাহ এখানে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, তিনি নিজে ধৈর্যশীলদের সঙ্গী। এর চেয়ে বড় সান্ত্বনা মুমিনের জন্য আর কী হতে পারে?
ধৈর্যের প্রকারভেদ
 
ইসলামী শিক্ষায় সবরকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, আর এই তিন ধরণের সবরই একজন মুমিনের সামগ্রিক জীবনকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে:১. আল্লাহর আনুগত্যে ধৈর্য: কঠিন হলেও নিয়মিত সালাত, রোজা এবং অন্যান্য ইবাদত সঠিকভাবে পালন করার জন্য যে মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন।

২. পাপ থেকে বিরত থাকার ধৈর্য: প্রবৃত্তির কামনা, শয়তানের প্ররোচনা এবং সমাজের অন্যায় থেকে নিজেকে দূরে রাখার সংগ্রাম।
৩. বিপদ-আপদে ধৈর্য: রোগ, শোক, আর্থিক ক্ষতি বা অন্য কোনো কষ্টের সময় আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসে ধৈর্যের ফল
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সবরকে ঈমানের অর্ধেক বলে অভিহিত করেছেন এবং এর চরম গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“ধৈর্য হলো আলো।”এই হাদীসটি ইঙ্গিত দেয় যে, সবর অন্ধকারে পথ দেখানোর মতো। এটি মানব হৃদয়ে এমন এক জ্যোতি তৈরি করে যা তাকে জীবনের হতাশা ও সংশয় থেকে মুক্ত রাখে।
 
আহলে বাইত (আঃ)-এর শিক্ষায় সবর
 
আহলে বাইত (আঃ)-এর পবিত্র ইমামগণ ধৈর্যকে কেবল তত্ত্ব হিসেবে নয়, বরং তাঁদের কর্মময় জীবনে এর বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তাঁরা জীবনের কঠিনতম সময়েও আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, 
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ) সবরের গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেছেন:
“ঈমানের ক্ষেত্রে ধৈর্যের স্থান এমন, যেমন শরীরের মধ্যে মাথার স্থান। যার ধৈর্য নেই, তার ঈমান নেই।” নাহজুল বালাগা, প্রজ্ঞাবাণী: ৮২]

এই মূল্যবান বাণীটি সবরকে ঈমানের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত করেছে। ধৈর্য ছাড়া কোনো ইবাদতই পূর্ণতা পায় না এবং জীবনপথে আল্লাহর আদেশ মেনে চলা অসম্ভব। কারবালার কঠিন পরীক্ষা থেকে শুরু করে ইমামদের (আঃ) নির্জন কারাবাস পর্যন্ত—তাঁদের জীবন প্রতিটি মুমিনের জন্য ধৈর্যের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে আছে। ধৈর্য বা সবর কেবল কষ্টের সময় দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করার নাম নয়। এটি আল্লাহর ওপর দৃঢ় আস্থার (তাওয়াক্কুল) একটি ফল। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জীবনের সকল পরিস্থিতিতে সবর করতে পারে, সে ইহকাল ও পরকালে সফলকাম হবে। আহলে বাইত (আঃ)-এর প্রদর্শিত পথে সবরের অনুশীলনই মুমিনকে সফলতার চাবিকাঠি এনে দেয়।

  ফজর/ ইয়াসিন মেহদী ( ইফাজ )

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?