পবিত্র আহলে বাইত [নবী পরিবার] সম্পর্কে আলোচনা

by Rashed Hossain

আমাদের অনেকের মনে ইসলাম সম্পর্কে ভালোবাসা রয়েছে। আমরা ইসলামী সমাজের বিকাশ ও প্রতিষ্ঠা কামনা করে থাকি। বাস্তবে কিন্তু আমরা ইসলামী সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠার কোন লক্ষণ দেখি না। আমরা আবার গভীরভাবে এর কারণ অনুসন্ধানও করি না। আসলে আমাদের ভালোবাসা প্রকৃত ভালোবাসা কিনা তা ভেবে দেখা একান্ত অপরিহার্য।
পবিত্র আহলে বাইত [নবী পরিবার] সম্পর্কে পবিত্র আল কোরআন ও হাদিস থেকে কিছু বর্ণনা আমরা এখানে তুলে ধরলাম। আপনি এগুলো বিভিন্ন উৎসের সাথে মিলিয়ে দেখবেন। সকল বর্ণনা থেকে আপনি সারবস্তু আহরণ করার চেষ্টা করবেন। বিজ্ঞজনের কাছে আপনার স্বাধীন আকলভিত্তিক (ঝবষভ রিংফড়স নধংবফ) প্রশ্ন করে করে সত্য বের করে নিবেন। আমরা মনে রাখবো যে আমরা সর্বদা সর্বজন গ্রাহ্য শতসিদ্ধ মতটি গ্রহণ করবো। তবে সিদ্ধান্তে উপনীত হবার আগে নিজে কমজ্ঞানী হলেও একজন যুক্তিবাদীর মত আলোচ্য ধারণার পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রশ্ন করবো যাতে সত্যে উপনীত হওয়া সহজতর হয়।

১। পবিত্রতার আয়াত (আয়াতে তাত্যহীর)
“…………..হে আহলে বাইত! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রাখতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পুতঃপবিত্র রাখতে।” – সূরা-আহযাব (৩৩), আয়াত-৩৩।
এ আয়াতটিতে কেবল মাত্র চার ব্যক্তিত্বকে নির্দেশ করা হয়েছে। তারা হলেন মহানবী (সা.) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (সা.আ.), তাঁর স্বামী হযরত আলী (আ.), এবং তাঁদের দুই সন্তান হযরত হাসান (আ.) ও হযরত হোসাইন (আ.)।

২। মহব্বতের আয়াত (আয়াতে মাওয়াদ্দাহ)
“………… (হে মুহাম্মদ!) আপনি (মানব জাতিকে) বলুন, ‘আমি আমার এ (নবুয়্যুতি) কাজের বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আমার নিকট আত্মীয়দের প্রতি (আহলে বাইত) গভীর ভালোবাসা ব্যতিত অন্য কোন প্রতিদান চাইনা।’ ……..।”- সূরা-শূরা (৪২), আয়াত-২৩।
এ আয়াতে মাহানবী (সা.) এর নিকট আত্মীয় বলতে ঐ চার জনকেই বুঝানো হয়েছে।

৩। লা’নতের (অভিসম্পাত) আয়াত (আয়াতে মুবাহিলা)
“তোমার নিকট জ্ঞান পৌঁছানোর পর যে কেউ এ বিষয়ে তোমার সাথে তর্ক করে, তা’হলে তাকে বলঃ ‘এসো, আমরা আহবান কারি আমাদের সন্তানদেরকে আর তোমরাও তোমাদের সন্তানদেরকে, (আমরা) আমাদের নারীগণকে আর (তোমরাও) তোমাদের নারীগণকে, (আমরা) আমাদের নিজদিগকে আর (তোমরাও) তোমাদের নিজদিগকে, অতঃপর আমরা আল্লাহর কাছে বিনীত ফরিয়াদ জানাই এবং মিথ্যাবাদীদের উপর সেই আল্লাহর লা’নত।” – সূরা-আল ইমরান (৩), আয়াত-৬১।
এ ঘটনা মহানবী (সা.) এর আহলে বাইতের সুনির্দিষ্ট মর্যাদাকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করছে যা ইসলামের ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জিতে মুবাহিলা নামে পরিচিত।

৪। নামাজের আয়াত (আয়াতে সালাত)
“নিশ্চয আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীজির (সা.) উপর দরূদ পাঠ করেন। হে মুমীনগণ! তোমরাও তাঁর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করো।” – সূরা-আহযাব (৩৩), আয়াত-৫৬।
এ আয়াতে মহানবী (সা.) ও তাঁর আল (পরিবার) এর উপর সালাম প্রেরণ করতে মুসলমানদের উপর নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এটা এমন একটি পারিভাষিক শব্দ যা সম্পূর্ণরূপে হযরত ইমাম আলী (আ.) হযরত ফাতিমা (সা.আ.) হযরত ইমাম হাসান (আ.) এবং হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) এবং তাঁদের ন্যায়নিষ্ঠ বংশধরদের জন্য এককভাবে সংরক্ষিত। নবীজি (সা.) ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের উপর প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার সময়ে দরূদ ও সালাম প্রেরণ করা একজন মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।
মহানবী (সা.)কে সাহাবীগণ সালাম প্রেরণের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জবাবে শিখিয়ে দিয়েছিলেন : “বলঃ হে আল্লাহ! মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের বংশধরদিগের উপর সালাম প্রেরণ করুন যেমনভাবে আপনি ইব্রাহিম ও ইব্রাহিমের বংশধরদিগের উপর সালাম প্রেরণ করেছিলেন; এবং মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের বংশধরদিগের উপর বরকত প্রেরণ করুন যেমন করে আপনি ইব্রাহিম ও ইব্রাহিমের বংশধরদিগের উপর বরকত প্রেরণ করেছিলেন; আপনি প্রশংসার যোগ্য এবং গৌরবময়।”

৫। অভিভাবকত্বের আয়াত (আয়াতে বেলায়াত)
“তোমাদের ওলী (অভিভাবক) তো আল্লাহ, তাঁর রসুল ও মুমিনগণ-যারা নামাজ কায়েম করে ও রুকু অবস্থায় যাকাত আদায় করে। যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করে এবং তাদেরকেও যারা ঈমান এনেছে, এরাই তো আল্লাহর দল যারা অবশ্যই বিজয়ী হবে।”- সূরা-মায়েদা (৩) আয়াত-৫৫-৫৬।
এ আয়াতটি হযরত ইমাম আলী (আ.) সম্পর্কে নাজিল হয়।

৬। ঘোষণার আয়াত (আয়াতে তাবলিগ)
“হে রসুল! আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে আপনার প্রতি যা নাজিল হয়েছে তা জনগণের কাছে প্রচার করে দিন। যদি তা না করেন তা হলে তো আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছে দিলেন না। মানুষের দুরভিসন্ধি থেকে আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করবেন।” – সূরা-মায়িদা (৫), আয়াত-৬৭।
এ আয়াতটি বিদায় হজ্জে গাদীর-এ-খুম নামক স্থানে নাজিল হয়। অত:পর মহানবী (সা.) হযরত ইমাম আলী (আ.) কে তাঁর অছি এবং মুমিনদের অভিভাবক হিসাবে ঘোষণা করেন। মহানবী (সা.) উপস্থিত জনতার কাছ থেকে দ্বীন পৌঁছে দেবার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তখন মহান আল্লাহ দ্বীনের পরিপূর্ণতার আয়াত (৫:৩) নাজিল করেন হযরত ওমরসহ উপস্থিত সাহাবীগণ হযরত ইমাম আলী (আ.) এর হাতে গাদীরে খুমে বায়াত করেন।

৭। খাদ্যদান করার আয়াত (সূরা ইনসান/দাহর)
“তাঁরা মানত পুরা করেন এবং সেই দিনের ভয় করেন, যে দিনের অনিষ্ট ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাবে। আর আহার্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্বেত্ত তাঁরা তাঁর প্রেমে বিশেষ আগ্রহের সাথে অভাবগ্রস্ত-মিসকিন, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করেন এবং বলেন, কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদিগকে আহার্য দান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে এ জন্যে কোন প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়। আমরা আশংকা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের। পরিনামে আল্লাহ তাঁদেরকে রক্ষা করবেন সেই দিবসের অনিষ্ট হতে এবং তাঁদেরকে দিবেন উৎফুল্লতা ও আনন্দ।”- সূরা- ইনসান/দাহর (৭৬), আয়াত-৭-১১।

পবিত্র কোরআনের এ আয়াতগুলো হযরত ইমাম আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (সা.আ.), হযরত ইমাম হাসান (আ.) ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) সম্পর্কে নাজিল হয়েছে। তাদের মানবিকতার/ নিঃস্বার্থপরতার ও তাকওয়ার উচ্চতম প্রশংসা করা হয়েছে। আর তাদেরকে পুরস্কারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। মহানবী (সা.) এর পবিত্র আহলে বাইত (আ.) গণের ফজিলত সম্পর্কে (১) হাদিসে সাকালাইন, (২) হাদিসে সাফিনা (কিস্তি) (৩) মতানৈক্যের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার হাদিস, (৪) হাদিসে আল-কিসা, (৫ম) হাদিসে মাওয়াদ্দাহ প্রভৃতি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আমরা এখানে শুধু হাদিসে সাকালাইন হাদিসটি উল্লেখ করলাম।

মহানবী (সা.) বলেন, “আমি তোমাদের মাঝে অতীব গুরুত্বপূর্ণ দুটি জিনিস (সাকালাইন) রেখে যাচ্ছি: আল্লাহর কিতাব এবং আমার ইতরাত, আহলে বাইত। নিশ্চয়ই এ দুটি জিনিস হাউজে কাউসারে আমার সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত কখনো পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। সূত্র : সহিহ্ তিরমিযী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, কানুযুল উম্মাল, তাফসির ইবনে কাসির, মিশকাতুল মাছবিহ, তফসিরে কবির।
সংকলন :
এস, এ, এম, এম মঈনুল ইসলাম কাজেমী কিচলু
ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইউনাইটেড মুসলিম অরগানাইজেশন (ইউ,এম,ও)
জেলা সমন্বয়কারী, সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস, সাতক্ষীরা######

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?