আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী এবং অন্তরের গভীর অনুভুতিরও পরিপূর্ণ অবগত। তিনি সৃষ্টির প্রতিটি দিক পর্যবেক্ষণ করেন এবং সমস্ত কিছুর উপর তাঁর অশেষ ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। তাই প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য হলো মৃত্যুর আগমনের পূর্বেই করণীয় কাজ সম্পন্ন করা, অবসর সময়কে বৃথা না কাটানো এবং পরকালের স্থায়ী বরকতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
হজরত আলী (আ.) আমাদের স্মরণ করিয়েছেন: “আল্লাহকে স্মরণ কর, হে মানব সমাজ। তিনি যা নির্দেশ দিয়েছেন তা মেনে চল এবং তোমাদের ওপর তাঁর হক পালন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের অহেতুক সৃষ্টি করেননি, তোমাদেরকে ছেড়ে দেননি এবং অজ্ঞতা ও অন্ধকারে রেখেও দেননি।”
আল্লাহ আমাদের জীবনের নিয়মাবলী, আমাদের আমল এবং মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করেছেন। তিনি আমাদের জন্য সবকিছুর ব্যাখ্যাসহ কিতাব নাজিল করেছেন (সূরা নাহল, আয়াত ৮৯)। এছাড়াও, তিনি তাঁর রাসূলের মাধ্যমে আমাদের কাছে সৎ ও বদ আমলের, আদেশ ও নিষেধের ব্যাখ্যা পাঠিয়েছেন। আমাদের উচিত এই বাণীর আলোকে আমাদের জীবন পরিচালনা করা।
মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে যে, অতীত সময়ে যদি আমরা আল্লাহর আদেশের প্রতি অবহেলা বা বিস্মৃতিতে সময় কাটাই, তবে বাকি জীবনটি খুব সীমিত। তাই বাকি সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা আমাদের কর্তব্য। অলসতা ও নিস্তব্ধতা পাপাচারের দিকে প্রলুব্ধ করে এবং আমাদের আত্মিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
আল্লাহর বান্দাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো:
সর্বোত্তম আত্ম-উপদেষ্টা সেই ব্যক্তি, যিনি আল্লাহর প্রতি অনুগত।
সবচেয়ে বড় আত্ম-প্রবঞ্চক সে, যিনি আল্লাহর অনুগত নয়।
সবচেয়ে বিপন্ন সে, যিনি নিজেকেই প্রতারণা করে।
ভাগ্যবান সে, যিনি অন্যদের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে।
ভাগ্যহীন সে, যিনি কামনা ও বাসনার শিকার হয়।
মনে রাখতে হবে, ক্ষুদ্রতম মুনাফেকি ও শির্ক ঈমানকে ক্ষয় করে এবং আকাঙ্খা-পূজারী আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকার পথে বাধা সৃষ্টি করে।
সত্য ও নৈতিকতার প্রতি সতর্ক থাকা অপরিহার্য। মিথ্যা ঈমানের বিপরীত এবং মিথ্যাবাদী মানুষের মর্যাদা ক্ষয় করে। ঈর্ষা ও বিদ্বেষ হৃদয়কে দুর্বল করে, ঠিক যেমন আগুন শুকনো কাঠকে পুড়িয়ে দেয়। কামনা বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিকে ক্ষয় করে। অতএব, কামনাকে মিথ্যার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, কারণ এটি মানুষকে প্রতারণার পথে ঠেলে দেয়।
পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ এবং আল্লাহর আদেশের প্রতি সৎ ও নিষ্ঠাবান থাকা প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। আমাদের উচিত প্রতিদিনের জীবনকে সচেতন ও উপকারী করে গড়ে তোলা, যাতে মৃত্যু ও পরকালের জন্য আমরা প্রস্তুত থাকি।
54
