পারস্যের জ্যোতির্ময়ী নারী আইনুশ শামস (রহ.)

by Syed Yesin Mehedi

আইনুশ শামস বিনতে আহমদ সাকাফিয়্যা (রহ.) ছিলেন পারস্যের জ্ঞানজগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি সমকালীন পÐিতমহলে একজন ফকিহ (আইনবিদ) ও মুহাদ্দিস (হাদিসবিশারদ) হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন এবং তারা তাঁর উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেন।
আইনুশ শামস (রহ.) ৫২০ হিজরিতে বর্তমান ইরানের ইস্পাহানে জন্মগ্রহণ করেন। ইরানে বসবাস করলেও তিনি ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত।
তিনি ছিলেন আরবের গোত্র হাওয়াজিনের বিখ্যাত বনু সাকিফ শাখার অন্তর্ভুক্ত। বনু সাকিফ গোত্র ইসলামের সোনালি যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দেয়। তাঁর পূর্বপুরুষরা ইরানের ইস্পাহানে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বংশপরম্পরা নিম্নরূপ : আইনুশ শামস বিনতে আহমদ বিন আবুল ফারাজ মাহমুদ।
তাঁর উপনাম উম্মুন নুর। বংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তাঁকে সাকাফিয়্যা ও হাওয়াজিনিয়্যা এবং জন্মস্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ইস্পাহানিয়্যা বলা হয়।
ধর্মীয় জ্ঞানে পান্ডিত্যের জন্য ইস্পাহানে আইনুশ শামস (রহ.)-এর পরিবারের বিশেষ খ্যাতি ও মর্যাদা ছিল। ইমাম জাহাবি (রহ.) বলেন, ‘তিনি ছিলেন হাদিস বর্ণনাকারী ও নির্ভরযোগ্য পরিবারের সদস্য।
তিনি আরো বলেন, আইনুশ শামস (রহ.) ছিলেন হাদিস বর্ণনাকারী ও হাদিসশাস্ত্রে পান্ডিত্যে পরিবারের সদস্য।’ পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে তিনি খুব অল্প বয়সে পারিবারিক পরিমন্ডলে জ্ঞানচর্চা শুরু করেন। ইমাম জাহাবি (রহ.)-এর বর্ণনা মতে, তিনি মাত্র চার বছর বয়সে জ্ঞানচর্চা শুরু করেন, যা তৎকালীন যুগের বিবেচনায় প্রায় অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
পারিবারিক পরিমন্ডলের বাইরেও আইনুশ শামস (রহ.) সময়ের বিখ্যাত আলেমদের থেকে হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রের জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ফকিহ ও মুহাদ্দিস ইসমাইল ইবনে ইখশিজ (রহ.) ও মুহাম্মদ বিন আলী সালিহানি (রহ.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তাঁকে এই মহান দুই আলেমের সর্বশেষ শিষ্য মনে করা হয়। শায়খ মুহাম্মদ বিন আলী (রহ.)-এর কাছে তিনি ‘জুজ আবিশ শায়খ’, ‘আদ-দিয়্যাত’, ‘আত-তাওবা’, ‘আওয়ালিল কিবাব’, ‘আহাদিসু বকর বিন বিকার’ ইত্যাদি গ্রন্থ পাঠ করেন। দাদা মুতাহহির বিন আবদুল ওয়াহেদ থেকেও তিনি ফিকহ ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করেন।
আইনুশ শামস সাকাফিয়্যা (রহ.)-এর পাÐিত্যের খ্যাতি ও সুনাম মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শাম, মিসর, মরক্কো ও সুদূর আন্দালুস (মুসলিম স্পেন) থেকে শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে ফিকহ ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করতে উপস্থিত হতো। এমনকি নবীপরিবারের সন্তান ও আইয়ুবীয় রাজপরিবারের সদস্যরাও তাঁর দরসে উপস্থিত হতো। তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন বিখ্যাত মুহাদ্দিস জাকি বাজরালি (রহ.), শামের ফকিহ ও হাদিসবিশারদ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইউসুফ ইশবিলি (রহ.) এবং ইরাকের খ্যাতিমান মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিক মুহিবুদ্দিন আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন মাহমুদ বাগদাদি (রহ.), যিনি হাফেজে বাগদাদ ও ইবনুন নাজ্জার নামে পরিচিত ছিলেন। সুদূর স্পেন থেকে তাঁর কাছে জ্ঞানার্জন করতে এসেছিলেন হাফেজ নাজিবুদ্দিন আবু মুহাম্মদ আবদুল আজিজ ইবনুল আমির। রাষ্ট্রদূত সদরুদ্দিন আবু আলী হাসান বিন মুহাম্মদ নিশাপুরী (রহ.) আইনুশ শামসের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়া জিয়া মুহাম্মদ, তাকি ইবনুল ইজ্জ, আবুল আব্বাস আহমদ বিন উসমান, আবু আলী মুহাম্মদ বিন আবিল ফুতুহ, শরিফ ফখরুদ্দিন আবু আবদুল্লাহ দামেস্কি (রহ.) প্রমুখ তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। হাফেজ ইবনে আসাকির (রহ.) এবং আলী ইবনে আহমদ আল-মাকদিসি (রহ.) তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনার অনুমতি গ্রহণ করেন।
ইমাম জাহাবি (রহ.) তাঁকে সপ্তদশ স্তরের হাফেজে হাদিস বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘আইনুশ শামস (রহ.) সময়ের নির্ভরযোগ্য আলেমা ছিলেন। তিনি নেককার সচ্চরিত্রের অধিকারী শায়খা (শিক্ষিকা) ছিলেন।’
ইবনুল ইমাদ হাম্বলি (রহ.) বলেন, আইনুশ শামস বিনতে আহমদ (রহ.) ছিলেন ইস্পাহানের বিশিষ্ট ফকিহ।
মহান এই নারী মনীষী ৬১০ হিজরির রবিউল আখের মাসের শেষভাগে মারা যান। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। আল্লাহ তাঁর কবরকে প্রশান্ত করুন। আমিন।
তথ্যঋণ : সিয়ারু আলামিন নুবালা : ২২/২৪; সাজাতুজ জাহাব : ৭/৭৯;
তারিখুল ইসলাম : ১৩/২৪৬

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?