বর্ষপরিক্রমায় প্রতি বছর যখন রাসূলে খোদার (সাঃ) মহিমান্বিত জন্মদিবস আসে, তখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নতুন করে তাঁর শুভাগমণের সৌরভ অনুভব করে। নবুয়্যাত, রেসালত এবং রাসূলে খোদার (সাঃ) আনীত আসমানী গ্রন্থ আল কোরআনের অত্যুজ্জ্বল আলো তাদের অন্তরকে উদ্ভাসিত করে। মহান আল্লাহ চান আমরা যেন প্রতিদিনই নতুনভাবে উজ্জ্বীবিত ও উদ্ভাসিত হই। কেননা, আল্লাহপ্রদত্ত প্রতিটি দিনই আমাদের জীবন ও আয়ুর সাথে সংযোজিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের উপর নতুন নতুন দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে। মহান আল্লাহ্ চান আমরা যেন আমাদের এ প্রতিদিনের জীবনকে নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনাতে মনোনিবেশ করি। অতীত দিনগুলির বিশ্লেষণের পাশাপাশি এটা মনে রাখা জরুরী যে, আমাদের আয়ু ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু দায়িত্বাবলী বহাল থাকছে। আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, আমরা যেন সময়ের কোন বাধা-বিপত্তিকে ভয় না পাই। কারণ এগুলো মানুষকে কর্তব্যবিমুখ করে তোলে। ইসলাম ধর্মে মানুষ কখনও অবসরপ্রাপ্ত হয় না। বরং যেসব দায়িত্ব সম্পাদনের ক্ষেত্রে সে অক্ষম হবে, সেগুলো থেকে কেবল দায়মুক্তি পেতে পারে। তাছাড়া যেসব আমল সম্পাদনের সামর্থ্য রয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে আঞ্জাম দিতে সে সম্পূর্ণ দায়বদ্ধ। কেউ দায়িত্বহীন ও চিন্তা- চেতনা ব্যতিরেকে জীবন অতিবাহিত করে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবে, এমন অবস্থাকে ইসলাম আদৌ স্বীকৃতি দেয় না। আল্লাহ তায়ালা কখনও এমনটি পছন্দ করেন না যে, মানুষ দায়িত্বহীনভাবে জীবনযাপনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে। বরং, তিনি চান মানুষ চেষ্টা-সাধনা ও স্বীয় দায়িত্বাবলী যথাযথভাবে সম্পাদনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। প্রতিটি মানুষের স্মরণ রাখা অত্যন্ত জরুরী যে, একদিন তাকে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু এ পৃথিবী থেকে বিদায়লগ্নে এখানে তাকে কিছু সে কীর্তি রেখে যেতে হবে। কেননা, তার পূর্বক এবং সে তা হতে উপকৃত হয়েছে। সুতরাং এ তার কি দায়িত্ব হলো নিজের অবর্তমানে এমন কোন কীর্তি রেখে দের জীবনে বিশেষ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। অতএব, রাসূলে খোদার (সাঃ) মহিমাধিত জন্মবার্ষিকীকে সম্ভাষণ জানানোর মধ্য দিয়ে আমাদেরকে নতুন জীবনের শপথ নিতে হবে। আমাদেরকে অবশ্যই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সকল আনাচার ও কুসংস্কারের শৃংখলকে ছিন্ন করে এবং জীবনের যাবতীয় পংকিলতা হতে মুক্ত হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সমগ্র বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিব যে, আমরা মুসলমান হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি ও মুসলমান হয়ে জীবনযাপন করব। আর ইসলামের ছায়াতলেই উন্নতি ও অগ্রগতি হাসিল করব। কেননা, ইসলাম মানুষের চিন্তা-চেতনা ও কর্মতৎপরতাকে সক্রিয় করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে, যাতে করে সবার মাঝে নতুন আশা ও উদ্দীপনা জাগরিত হয়। অপর দিকে যারা কেবল অলস ও কর্মবিমুখ হয়ে জীবনের মূল্যবান দিনগুলোকে অর্থহীনভাবে কাটিয়ে দেয়, ইসলামে তাদেরকে সামান্যতম সম্মান দেওয়া হয় নি। যারা কোনরূপ চেষ্টা ও সাধনায় নিয়োজিত হয় না এবং নিজেদের অন্তঃকরণকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় রেখে চেতনাহীনভাবে বিচরণ করে, ইসলাম ধর্মে তাদেরকে ভীষণভাবে তিরষ্কৃত করা হয়েছে। ইসলাম আল্লাহর পথে জিহাদ ও চেষ্টা-সাধনাকারীদের ধর্ম। এ ধর্মে সবাইকে সর্বদা ও সর্বত্র কর্মতৎপর থাকতে আহ্বান করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ যতবেশি দায়িত্বশীল হবে, ততবেশি আল্লাহর প্রিয় ও নিকটবর্তী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে। কাজেই যে ব্যক্তি নিজের ও পরিবারবর্গের জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিশ্রম করে, সে আল্লাহর নিকট অত্যন্ত প্রিয়ভাজন। যে নিজের জ্ঞান ও বিদ্যার মাধ্যমে অন্যদেরকে শিক্ষিত করে তোলে, সে আল্লাহর কাছে প্রিয়। যারা সমাজে শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে এবং মানুষের সমস্যাদি দূরীকরণের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেয় এবং পরিশ্রম করে, নিঃসন্দেহে তারা আল্লাহর কাছে বিশেষ সম্মানে ভূষিত। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে জ্ঞান ও বিবেকের সাহায্যে তার নির্দেশিত পথে পরিচালিত হতে এবং বিধানাবলী যথাযথভাবে মেনে চলতে আদেশ দিয়েছেন। যারা মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন করে। তারাই জিহাদ ও সংখানে ভূমিকা, দাওয়াতী কার্যক্রমে সক্রিয় ও বাধা-বিপত্তি মোকাবেলায় সুর এবং রাসূলে খোদা (সাঃ) পবিত্র পদাংক অনুসরণ করে ইসলামের শ্বাশ্ব বাণীকে সর্বত্র পৌঁছে দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দিবেন। (আল ইমরান, আয়াত নং ৩১)
১ বস্তুতঃ মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপনের প্রকৃত মর্মার্থ হচ্ছে রাসূলে খোলা (সাঃ) মহান আল্লাহর পক্ষ হতে যে সব আদেশ ও নিষেধ জারী করেছেন, রাসূলপ্রেমীরা সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবে। প্রত্যেক মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা। আর মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপনের সূত্র ধরে এ বিষয়টি সবাইকে ভালভাবে অনুধাবন করতে হবে যে, ইসলামের বিরুদ্ধে বর্তমান সময়ের আগ্রাসণ রাসূলে খোদার (সাঃ) সময়ের চেয়ে অধিকতর ভয়াবহ ও তীব্রতর। মুসলমানদেরকে অবশ্যই জেনে রাখা উচিত যে, ইসলামকে বিকৃত করার হীন মানসে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তিরা বর্তমানে সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এ সময় সব চেয়ে জরুরী হচ্ছে আমাদের কর্ম ও জীবনধারায় রাসূলে খোদার (সাঃ) সরব উপস্থিতি এবং চিন্তা-চেতনায় তাঁর একচ্ছত্র প্রভাব অনুভব করা। আমাদের কেবল সেগুলোই পছন্দ করা উচিত, যেগুলোকে তিনি পছন্দ করেন এবং সেসব কিছু হতে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয় যেগুলো থেকে তিনি বিরত থেকেছেন। আমাদের বাস্তব পদক্ষেপসমূহ রাসূলে খোদার (সাঃ) বাস্তব পদক্ষেপের অনুরূপ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিনি যাদের সাথে নমনীয় ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেছেন, আমাদেরও উচিত তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করা। তিনি যাদের সাথে কঠোর আচরণ করেছেন, আমাদেরকে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। রাসূলে খোদাকে (সাঃ) পুংখানুপুংখভাবে অনুসরণ করতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রতি কড়া আদেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহর মধ্যে সর্বোত্তম জীবনাদর্শ, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে ( সূরাঃ আহযাব, আয়াত নং ২১ )
১ নিঃসন্দেহে রাসূলে খোদা (সাঃ) আমাদের জন্য সর্বোত্তম জীবনাদর্শ। কাজেই আমাদের একান্ত দায়িত্ব হচ্ছে জীবন চলার পথে একমাত্র তাঁকেই আদর্শ হিসেবে বেছে নেওয়া। তাঁকে অনুসরণ করা এবং তাঁর থেকেই শিক্ষা নেওয়া। কেননা, একমাত্র যে জিনিসটি তাঁর সাথে আমাদের সম্পর্কের সেতুবন্ধন রচনা করে এবং পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে, তা হচ্ছে তাঁর পবিত্র রেসালত ও জীবনাদর্শ। এভাবে তাঁর জীবন হচ্ছে আমাদের জীবন এবং তার মৃত্যু হচ্ছে আমাদের মৃত্যু। আর আমাদের প্রতি আল্লাহ তায়ালার সুস্পষ্ট আদেশ হচ্ছে, রাসূলে খোদার (সাঃ) পদাংক অনুসরণ, তাঁর থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ এবং তাঁরই পথে পরিচালিত হওয়া।