মৃতদের অসম্মান করা স্বভাবজাত প্রবণতার বিরোধী

by Syed Yesin Mehedi

মানুষ যেকোনো আদব-কায়দা ও নিয়ম-কানুনেরই অনুসরণ করুক না কেন, সে মৃতদের অসম্মান করাকে বৈধ জ্ঞান করে না; আর খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব, আম্বিয়া ও আউলিয়ার (আ.) কবরসমূহ তো অনেক দূরের কথা। এমনকি, শতাধিক বছর পূর্বে মৃত ব্যক্তিগণের প্রতি অসম্মান দেখানোটাও সকল মানুষের নিকট এক অপছন্দনীয় বিষয় হিসেবে গণ্য হয়।
কখনও কখনও অনেক দেশ ও নগরে রাস্তা প্রভৃতি নির্মাণের জন্যে, শতাধিক বছর পূর্বে পৃথিবী হতে চলে যাওয়া লোকদের প্রাচীন কবরগুলোকে ধ্বংস করা জরুরী হয়ে দাঁড়ায়; আর এমন ক্ষেত্রেও জনগণ বিভিন্ন মাধ্যমে নিজেদের মনোকষ্ট ব্যক্ত করে থাকে। অনুরূপভাবে যেখানে কোনো কবর নষ্ট হয় বা ভেঙ্গে যায় কিংবা কবর হতে কোনো হাড় বেরিয়ে আসে, সেখানে সেটিকে দাফন করা ও ঢেকে দেয়াকে নিজেদের দায়িত্ব জ্ঞান করে। সাধারণ কবরসমূহের বিপরীতে জনগণ এই দায়িত্ব-কর্তব্য অনুভব করে, আর আম্বিয়া-আউলিয়ার (আ.) কবরসমূহের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। কেননা, এর প্রতি জনগণ এক বিশেষ সম্মান দেখিয়ে থাকে।
ইতিপূর্বে আমরা কতক হাদীস উল্লেখ করেছিলাম যেগুলোতে বলা হয়েছিল যে, কবরকে এক বিঘত পরিমাণ উঁচু করা মুস্তাহাব; এর কারণ সম্ভবত এই হতে পারে যে, এর ফলে জনগণ কবরের স্থানকে বুঝতে পারবে ও এর উপর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে না। কতিপয় আলেম কবরসমূহের উপর চক পাউডারের প্রলেপ দেয়া ও এর উপর দালান নির্মাণ করাকে মাকরুহ জ্ঞান করেছেন; কিন্তু কবরের উপর বসা কিংবা এর গায়ে হেলান দেয়াকে হারাম [নিষিদ্ধ] জ্ঞান করেছেন। কারণ, এহেন আচরণকে কবরে শায়িত লোকের প্রতি অসম্মান গণ্য করা হয়েছে।
মৃতব্যক্তিকে গোসলদান, কাফন পরানো, হানূত [মৃতদেহে ব্যবহারের জন্য এক প্রকার সুগন্ধি] ব্যবহার, জানাযার নামায আদায়, লাশের পিছু পিছু চলা, দাফন করা সহ আরও অনেক মুস্তাহাব কাজ নিয়ে রচিত ইসলামী ফিকাহ্শাস্ত্রে “মৃতব্যক্তিদের আহকাম” শিরোনামে উল্লেখিত অধ্যায়টি প্রমাণ দেয় যে, দ্বীন ইসলাম মৃতব্যক্তিদের জন্যে এক সম্মানের প্রবক্তা। মৃতব্যক্তিদের সম্মান প্রদর্শন করা, দ্বীন ইসলামের জন্যেই বিশেষায়িত নয়, বরং অন্যান্য দ্বীন ও মাযহাবও মৃতব্যক্তিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে; এমনকি যেসব গোত্র এক মাযহাবী অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে নিজেদের মৃতব্যক্তিদেরকে পুড়িয়ে দেয়, তারাও এই কাজটিকে তাদের মৃতব্যক্তিদের প্রতি একপ্রকারের সম্মান জ্ঞান করে। আর যারা নিজেদের মৃতব্যক্তিদেরকে কবরে দাফন করে তারাও শত শত বছর পরও সেই কবরের প্রতি অসম্মান করাকে বৈধ জ্ঞান করে না।
এখন যদি কেউ বলে যে, নবী-রসুল ও ইমামগণের (আ.) কবরসমূহ পরিত্যক্ত ও উপেক্ষিত থাক – নাউযুবিল্লাহি মিন্ যালিক – এবং পশুপ্রাণী সহ মানুষের গমনাগমনের পথ তৈরী হোক, তাহলে তা আদৌ গৃহীত হবে না। কারণ, এটি এক অবমাননা। অবমাননার কোনো বিশেষ রূপাকৃতি নেই। নবী-রসুল ও আল্লাহর ওলিগণের (আ.) কবরসমূহ পশুপ্রাণী ও মানুষের জন্যে সহজে গমনাগমনের নিমিত্তে পরিত্যক্ত ও উপেক্ষিত হলে এবং – নাউযুবিল্লাহ – তা ডাস্টবিনে পরিণত হলেই, নিশ্চিতভাবে তা হবে অবমাননা ও তা বৈধ হবে না।
এখন যেহেতু এই অবমাননা বৈধ নয় সেহেতু এর পথরোধ করা আমাদের উচিৎ এবং পথরোধ করার কৌশল শুধুমাত্র এই যে, কবরের চারিপাশে দেয়াল, কিংবা দালান, কিংবা এ ধরনের কোনো কিছু নির্মাণ করতে হবে। কবরের চারিপাশে নির্মিত দালানগুলো ইবাদত-বন্দেগী, দোয়া, কাকুতি-মিনতি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ক্ষেত্র হতে পারে। এসব কবরকে অবমাননা করা বৈধ নয় এবং অবমাননার পথরোধ করার কৌশলও হচ্ছে এসবের উপর ঘর-বাড়ী তৈরী করা – যদিও সংক্ষিপ্তাকারে হয়।
সারকথা এই যে, আল্লাহর নবী ও ওলীগণ (আ.) “শাআয়েরাল্লাহ’র” অংশ এবং তাঁদের কবরসমূহও “শাআয়েরাল্লাহ”, কাজেই এগুলোকে সম্মান জানানো উচিৎ। কবরসমূহের উপর দালান নির্মাণ করা মাকরুহ হওয়া সংক্রান্ত বিধানটি যদি আমরা ধরেও নিই যে, সাধারণ লোকজনের কবরসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তবুও এটি এ ধরনের কবরসমূহের ক্ষেত্রে সক্রিয় নয় এবং এসব ক্ষেত্রে “আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা” এই দ্বিতীয় শিরোনামটি খাপ খায়। আর “আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করা” বিষয়টিও একটি পছন্দনীয় ও জরুরী বিষয়। কবরসমূহের সম্মান রক্ষা করা আবশ্যক এবং এসবের প্রতি অবমাননা প্রদর্শনের পথরোধ করাটাও স্বয়ং অপর এক পৃথক শিরোনাম (বিষয়) যা দালান নির্মাণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?