সৈয়দ মোহাম্মদ হোসাইন তাবাতাবাঈ (রহ.) চতুর্দশ হিজরী শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিয়া তাফসিরকারক, দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন।
তিনি ১২৮১ ফার্সী সৌর হিজরীতে (১৩২১ হি.) ইরানের তাবরিজ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা সেখানেই লাভ করেন এবং পরবর্তীতে ১৩০৪ ফা. সৌ. হিজরতে, উচ্চতর ধর্মীয় শিক্ষার জন্য ইরাকের নাজাফ শহরের হাওযা ইলমিয়ায় (ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ) গমন করেন। নাজাফে তিনি বহু মহান আলেমের নিকট থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন, যেমন: আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আবুল কাসেম খুঈ, আয়াতুল্লাহ নায়িনী, আয়াতুল্লাহ কোম্পানী এবং বিশেষভাবে আখলাক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান সৈয়দ আলী কাজী তাবাতাবায়ীর নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করেন।
কয়েক বছর শিক্ষালাভ ও আত্মশুদ্ধির পর তিনি ইরানে প্রত্যাবর্তন করেন এবং কুম শহরে বসবাস শুরু করেন। কুমের হাওযা ইলমিয়ায় তিনি ইসলামি দর্শন, কুরআনের তাফসির ও নৈতিকতা বিষয়ক পাঠদান শুরু করেন। তাঁর শিক্ষালয় থেকে অনেক বিশিষ্ট ছাত্র গড়ে ওঠেন, যেমন: শহীদ মুর্তজা মুতাহারী, আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমোলি, আয়াতুল্লাহ হাসানজাদে আমোলি, আয়াতুল্লাহ আব্দুল্লাহ নাসেরী প্রমুখ।
তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ “আল্ মীযান ফী তাফসিরিল কুরআন” যা কুরআনকে কুরআনের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার ভিত্তিতে রচিত এক গভীর তাফসির। এটি ইসলামী বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাফসিরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
তাঁর অন্যান্য দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:
বিদায়াতুল হিকমাহ, নিহায়াতুল হিকমাহ, উসূলে ফালসাফা ও রাহে রিয়ালিস্ম (দর্শনের মূলনীতি ও বাস্তববাদের পদ্ধতি), রেসায়েলে তাওহিদিয়া এবং শিয়া দার ইসলাম (ইসলামে শিয়া)।
আল্লামা তাবাতাবায়ী ছিলেন এক সংযমী, নৈতিক ও চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব যিনি স্বীয় জীবনকে কুরআন এবং আহলুল বাইতের (আ.) শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করেন।
তিনি ১৩৬০ ফা. সৌ. হিজরীতে (১৪০২ হি.) কুম শহরে ইন্তেকাল করেন এবং হযরত ফাতিমা মাসুমার (সা.) পবিত্র মাজারের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।
তাঁর রচনাবলি ও চিন্তাধারা আজও শিয়া বিশ্বের দর্শন, তাফসির ও ইসলামী চিন্তাধারার উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
34
আগের পোস্ট
