মাহে রমযানের শুরুতে যখন আমরা রোযা পালনের সূচনা করি, তখন আমাদের উচিত আল্লাহর নিকট এমন কামনা করা যাতে আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকওয়া অবলম্বন করতে পারি। এ মাসে আল্লাহ প্রদত্ত রহমত ও বরকতের স্রোতধারায় যদি আমরা আত্মগঠন ও আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারি, তবেই মাহে রমযান শেষে আমাদের জন্য প্রকৃত ঈদ অপেক্ষা করছে। রাসূলুল্লাহর (সা.) পর সর্বপ্রথম নামায আদায়কারী, মু’মিন ও মুত্তাকীনদের নেতা ইমাম আলী (আ.) মাহে রমযান শেষে আগত পবিত্র ঈদুল ফিতর সম্পর্কে বলেন, “নিশ্চয় এ দিনটি (ঈদুল ফিতরের দিন) তাদের জন্য ঈদের দিন, যাদের রোযা ও নামাযকে আল্লাহ কবুল করেছেন। আল্লাহর নাফরমানি ও গুনাহ ব্যতিরেকে প্রতিটি দিনই ঈদের দিন।” (নাহযুল বালাগা, হিকমত নং ৪২৮ ) অর্থাৎ ঐ দিনই মানুষের জন্য প্রকৃত ঈদের দিন, যেদিন সে সব ধরনের গুনাহ ও গর্হিত কর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছে।
রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) ঈদুল ফিতরের দিন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন, এমন সময় দেখতে পেলেন যে, দু’দল লোক খেলাধুলাতে মত্ত আছে। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,
নিশ্চয়ই আল্লাহ মাহে রমযানকে বান্দাদের জন্য প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে নির্ধারণ করেছেন; যাতে তাতে আল্লাহর আনুগত্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অতঃপর এ প্রতিযোগিতায় যারা অগ্রগামী হবে তারা বিজয়ী ও সফলকাম। পক্ষান্তরে, যারা পিছপা ও ব্যর্থ হবে, তারা ক্ষতিগ্রন্থ। সুতরাং আজ যারা অহেতুক হাসি-তামাশা ও খেলাধুলায় মত্ত আছে; সৎকর্মশীলরা যেদিন প্রতিদান গ্রহণ করবে, সেদিন তারা চরম ক্ষতিগ্রস্থ ও বঞ্চিত হবে।(“মান লা ইয়াহজারহুল ফাকীহ, খন্ড ১, পৃ. ৫১৬ এবং তোহফুল উকুল, পৃ.১১৭)
তাই আসুন, রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমযানে আমরা যাতে ক্ষতিগ্রস্থ ও বঞ্চিত না হই, সেজন্য প্রস্তুতি নিই। রাসূলুল্লাহ (সা.) মাহে রমযানকে সামনে রেখে শাবান মাসের শেষ শুক্রবার জুমার খুতবাতে রমযানের অপরিসীম ফজিলত ও তাৎপর্যের কথা উল্লেখের পর বলেন,
“অতএব পরিশুদ্ধ নিয়্যাত ও পবিত্র অন্তরের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে, যাতে তিনি এ মাসে তোমাদেরকে রোযা পালন ও কুরআন তিলাওয়াতের তৌফিক দান করেন। কেননা সে-ই হচ্ছে সর্বাপেক্ষা হতভাগা ও দূর্ভাগ্যবান যে এ মহান মাসে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। (খোতবায়ে শাবানিয়্যাহ’র অংশবিশেষ।)
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে প্রকৃত রোযা পালন, সঠিক উপায়ে ইবাদত-বন্দেগী, ইখলাস (পরিশুদ্ধি) এবং তওবার তৌফিক দান করেন। যেমনভাবে তিনি কীর্তিমান ও পূণ্যবানদেরকে নিজেদের নাফসের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার তৌফিক দিয়েছেন, তেমনভাবে আমরাও যেন নিজেদের নাফসের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং শয়তানি প্ররোচনা থেকে পরিত্রাণ লাভ করে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত হতে পারি।