আজকের সমাজে আমরা দেখি—একজন তরুণ বহু বছর ধরে পড়াশোনা করে, গ্রাজুয়েশন করে, সিভি হাতে নিয়ে অফিসে ঘুরে বেড়ায়। অবশেষে একটা চাকরি জোটে, যেখানে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত খেটে মাস শেষে বেতন পায় ১৫-২০ হাজার টাকা। অথচ এর পেছনে থাকে প্রচণ্ড মানসিক চাপ, পারিবারিক দুশ্চিন্তা আর জীবনের মূল্যবান সময়ের বোঝা।
অন্যদিকে, একজন দিনমজুর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর শ্রম দিয়ে দিনে পায় ৬০০-৭০০ টাকা। অর্থাৎ, তার দুই দিনের বেতন অনেক সময় একজন গ্রাজুয়েট অফিসকর্মীর এক মাসের বেতনের সমান হয়ে দাঁড়ায়।
তাহলে প্রশ্ন জাগে—শিক্ষার এই মূল্য কোথায় হারিয়ে গেল? কেন পরিশ্রমী শিক্ষিত তরুণরা অবহেলার শিকার?
ইসলামের আলোকে
ইসলামে শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার প্রাপ্য মজুরি দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“শ্রমিকের মজুরি তার ঘাম শুকানোর আগেই দাও।”
(ইবনু মাজাহ, হাদিস: ২৪৪৩)
তাহলে যাদের হাতের পরিশ্রমে সমাজ চলে, যাদের কাঁধে ভর করে একটি শহর দাঁড়িয়ে থাকে, সেই দিনমজুররা আসলে সম্মানের দাবিদার। ইসলামে কোনো কাজকে ছোট বলা হয়নি। বরং হালাল উপার্জনের প্রতিটি মাধ্যমই ইবাদত।
কর্তা ব্যক্তিদের প্রতি বার্তা
যারা অফিস চালান, যারা কর্মচারী নিয়োগ দেন—তাদের বোঝা উচিত যে শিক্ষিত তরুণরা কোনো যন্ত্র নয়। তাদেরও পরিবার আছে, স্বপ্ন আছে। ন্যায্য মজুরি, সম্মানজনক পরিবেশ ও নৈতিক দায়িত্ব পালন করাই একজন মালিকের প্রকৃত দায়িত্ব।
উপসংহার
শিক্ষা মানুষকে মর্যাদাশীল করে, কিন্তু সমাজ যদি সেই মর্যাদা না দেয়, তবে সেটাই হলো ব্যর্থতা। একজন দিনমজুর তার পরিশ্রম দিয়ে যেমন সম্মান পাওয়ার যোগ্য, একজন শিক্ষিত তরুণও তার যোগ্য সম্মান ও বেতন পাওয়ার অধিকারী।
শ্রমিক হোক বা শিক্ষিত কর্মী—দু’জনকেই ন্যায্য মূল্য ও সম্মান দেওয়া, এটিই প্রকৃত মানবতা আর ইসলামের শিক্ষা।
লেখক: সৈয়দ মোহাম্মাদ আলী আবেদী