সাহসী শিশু ইমাম জাওয়াদ (আ.) ও তাঁর অলৌকিক জ্ঞানের কয়েকটি ঘটনা

by Shihab Iqbal

দশই রজব ইসলামের ইতিহাসের এক মহাখুশির দিন কারণ মহাবরকতময় এই দিনে পৃথিবীতে এসেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য নবম ইমাম হযরত জাওয়াদ বা ইমাম তাকি()

নবীজীর আহলে বাইতের সদস্যরা কেবল মুসলমানদেরই ধর্মীয় নেতা নন বরং যারাই সত্য পথের সন্ধানী কিংবা কল্যাণকামীতাদের সবারই নেতা। আহলে বাইতের এই মহান ইমাম হযরত জাওয়াদ () এর জন্মবার্ষিকীতে আপনাদের সবার প্রতি রইলো অশেষ অভিনন্দন প্রাণঢালা মোবারকবাদ এবং বিশ্বনবী (সা.) তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের শানে পেশ করছি অসংখ্য দরুদ সালাম

ইমাম জাওয়াদের জন্ম হয়েছিল ১২৪৩ চন্দ্রবছর আগে ১৯৫ হিজরিতে তথা ৮১১ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল পবিত্র মদীনায়। মজলুম দরিদ্রদের প্রতি ব্যাপক দানশীলতা দয়ার জন্য তিনিজাওয়াদউপাধি পেয়েছিলেন। তাকি বা খোদাভীরু ছিল তাঁর আরেকটি উপাধি। জগতবিখ্যাত মহাপুরুষ ইমাম রেজা () ছিলেন তাঁর বাবা। আর তাঁর মায়ের নামসাবিকাহবলে জানা যায়। ইমাম রেজা () তাঁর এই স্ত্রীর নাম রেখেছিলেন খিইজরান। তিনি ছিলেন মহানবীর স্ত্রী উম্মুল মুমিনিন হযরত মারিয়া কিবতির () বংশধর

ইমাম জাওয়াদ () ১৭ বছর ইমামতের দায়িত্ব পালনের পর মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহাদত বরণ করেন। তিনিই হলেন ইসলামের ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়স্ক ইমাম

আহলে বাইতের অন্য ইমামগণের মত ইমাম জাওয়াদ (.) ছিলেন উচ্চতর নৈতিক গুণ, জ্ঞান পরিপূর্ণতার অধিকারী। ইসলামের মূল শিক্ষা সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন এবং বিকাশ ছিল তাঁর তৎপরতার মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু। সেযুগের সব মাজহাবের জ্ঞানীগুণীরা ইমাম জাওয়াদ (.)’ উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।সমসাময়িক যুগের প্রখ্যাত সুন্নি চিন্তাবিদ কামালউদ্দিন শাফেয়ি ইমাম জাওয়াদ (.) সম্পর্কে বলেছেন, “মুহাম্মাদ বিন আলী তথা ইমাম জাওয়াদ (.) ছিলেন অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা গুণের অধিকারী। মানুষের মুখে মুখে ফিরতো তাঁর প্রশংসা। তাঁর উদারতা, প্রশস্ত দৃষ্টি সুমিষ্ট কথা সবাইকে আকৃষ্ট করত। যে তাঁর কাছে আসতো নিজের অজান্তেই এই মহামানবের অনুরাগী হয়ে পড়ত এবং তাঁর কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করত।

ইমাম জাওয়াদ () মাত্র আট বছর বয়সে ইমামতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এতো অল্প বয়সে তাঁর ইমামতিত্বের বিষয়টি ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। ফলে অনেকেই বিষয়ে সন্দেহ করতেন। অথচ আল্লাহর তো এই শক্তি আছে যে তিনি মানুষকে তার বয়সের স্বল্পতা সত্ত্বেও পরিপূর্ণ বিবেকবুদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন। কোরানের আয়াতের ভিত্তিতে পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও এরকম উদাহরণ বহু আছে। যেমন শিশুকালে হযরত ইয়াহিয়া () এর নবুয়্যত প্রাপ্তি, মায়ের কোলে নবজাতক ঈসা () এর কথা বলা ইত্যাদি সর্বশক্তিমান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতারই নিদর্শন

ইমাম জাওয়াদ () শৈশবকৈশোরেই ছিলেন জ্ঞানেগুণে, ধৈর্য সহনশীলতায়, ইবাদতবন্দেগিতে, সচেতনতায়, কথাবার্তায় শীর্ষস্থানীয় মহামানব। একবার হজ্জ্বের সময় বাগদাদ এবং অন্যান্য শহরের বিখ্যাত ফকীহদের মধ্য থেকে আশি জন মদীনায় ইমাম জাওয়াদ () এর কাছে গিয়েছিলেন। তাঁরা ইমামকে বহু বিষয়ে জিজ্ঞেস করে অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত সন্তোষজনক জবাব পেলেন। ফলে জাওয়াদ ()’ ইমামতিত্বের ব্যাপারে তাদের মনে যেসব সন্দেহ ছিলতা দূর হয়ে যায়

সাহসী শিশু ইমাম তাঁর অলৌকিক জ্ঞান

আব্বাসিয় যুগের কথা। খলিফা মামুন যাচ্ছিলেন শিকারে। বিশ্বনবীর (সা) আহলে বাইতের সদস্য ইমাম রেজা ()’ নয় বছরের শিশু পুত্র ইমাম জাওয়াদ () নীরবে দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তার পাশে। সেখানে খেলাধুলায় মত্ত ছিল একদল শিশু। খলিফা মামুনের কাফেলাও এলো সেই রাস্তায়। খলিফার সেনা প্রহরীদের দেখে ভীত শিশুরা দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু শিশু ইমাম সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন

খলিফা মামুন ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে প্রশ্ন করলেন: এই যে শিশু, তুমি কেনো ওই শিশুদের মতই চলে গেলে না?

শিশু ইমাম বললেন, আমি তো কোনো অপরাধ করিনি, আর রাস্তাও আগলে রাখিনি তাই আমি কেনো ভয় পাবো এবং ওদের মতো দৌড় দিয়ে সরে পড়ব?

শিশুর যৌক্তিক দৃঢ়চেতা বক্তব্যে মুগ্ধ হয়ে মামুন বললেন, তোমার নাম কি?

উত্তরে শিশু ইমাম বললেন, মুহাম্মাদ

তুমি কার ছেলে?-প্রশ্ন করেন মামুন

আমি আলী ইবনে মুসার () পুত্র

চলে গেলেন মামুন। শিকারে মামুনের পোষা বাজপাখি একটি মাছ নিয়ে আসে ঠোঁটে করে। মামুন বিস্মিত হলেন

রাজপ্রাসাদে ফেরার পথে একই জায়গায় আবারও একই ঘটনা ঘটতে দেখলেন। অর্থাৎ মামুনের শিকারদলের সেনাসামন্ত দেখেই খেলাধুলা ছেড়ে শিশুরা আবারও পালিয়ে যায়, কিন্তু আলী ইবনে মুসার () শিশু পুত্র এবারও দাঁড়িয়ে রয়েছে নির্ভীক চিত্তে

এবার মামুন তার হাতের তালুতে ওই মাছটি লুকিয়ে রাখলেন। তিনি ঘোড়ার গাড়ি থামিয়ে শিশু ইমামকে প্রশ্ন করেন, বলোতো আমার হাতে কি? শিশু ইমাম বললেন, আল্লাহ আকাশ জমিনের মধ্যে মেঘমালা সৃষ্টি করেন। আর রাজাদের বাজ পাখিগুলো সেখান থেকে মাছ শিকার করে তা রাজাদের কাছে নিয়ে আসে। আর রাজারা তা তাদের হাতের মুঠোয় লুকিয়ে রাখে এবং নবীর আহলে বাইতের কোনো এক সদস্যকে প্রশ্ন করে যে, বলোতো আমার হাতের মুঠোয় কি আছে?’

মামুন বললেন, সত্যিই তুমি ইমাম আলী আররেজা যোগ্য সন্তান

মামুন তখন তাকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যান এবং রাজপ্রাসাদের কাছে একটি ভবনে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন

শিশু ইমাম হযরত জাওয়াদ ()-কে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বড় ধরনের নানা সমাবেশের আয়োজন করতেন মামুন। বড় বড় গুণী পণ্ডিতরা সেখানে এসে এই শিশু ইমামের কাছ থেকে নানা জ্ঞান অর্জন করতেন। মামুন তার শাসনযন্ত্রের সবাইকে এটা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ইমাম রেজা ()’ পুত্র শিশু হলেও তিনি তাঁর বাবার সব গুণ যোগ্যতা পুরো মাত্রায় অর্জন করেছেন

ইমাম জাওয়াদ () বড়ো বড়ো পণ্ডিতদের সাথে এমন এমন তর্কবাহাসে অংশ নিতেন যা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। একদিন আব্বাসীয় খলিফা মামুন ইমাম জাওয়াদ () এর জ্ঞানের গভীরতা পরীক্ষা করার জন্যে একটি মজলিসের আয়োজন করে। সেখানে তৎকালীন জ্ঞানীগুণীজনদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মজলিসে তৎকালীন নামকরা পণ্ডিত ইয়াহিয়া ইবনে আকসাম ইমামকে একটি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নটি ছিল এই: যে ব্যক্তি হজ পালনের জন্যে এহরাম বেঁধেছে,সে যদি কোনো প্রাণী শিকার করে,তাহলে এর কী বিধান হবে? ইমাম জাওয়াদ () এই প্রশ্নটিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করে মূল প্রশ্নের সাথে সংশ্লিষ্ট ২২টি দিক তুলে ধরে উত্তরের উপসংহার টানেন। উত্তর পেয়ে উপস্থিত জ্ঞানীজনেরা অভিভূত হয়ে যান এবং ইমামের জ্ঞানগত অলৌকিক ক্ষমতার প্রশংসাও করলেন

একটি বর্ণনামতে পুরো ঘটনা ছিল রকম:

ইহরাম বাঁধা অবস্থায় শিকার করা সম্পর্কে ইমাম (.) এর উত্তর

খলিফা মামুন যখন সিদ্ধান্ত নিল নিজ কন্যা উম্মুল ফযল কে আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে আলী আল রেযা তথা ইমাম জাওয়াদ (.) এর সাথে বিবাহ দিবেন তখন তার নিকট আত্মীয়রা তাকে ঘিরে ধরলো। এবং বললেন : হে আমীরুল মুমিনিন! আমরা আপনাকে কসম দিচ্ছি যেন এমন কেন কাজ করবেন না যাতে আমারে হাতে যে রাজত্ব রয়েছে তা হাতছাড়া হয়ে যায় এবং খেলাফতের এই যে পরিচ্ছদ আমাদের দেহে শোভা বর্ধন করছে তা আমাদের দেহ থেকে খুলে ফেলেন

মামুন বললেন : চুপ করো। আমি তোমাদের কারও থেকে তার সম্বন্ধে কিছুই গ্রহণ করবো না। তারা বললেন : হে আমীরুল মুমিনিন! আপনার কন্যা নয়নের মণিকে আপনি এমন এক শিশুর সাথে বিবাহ দিচ্ছেন যার এখনো আল্লাহর দ্বীনে জ্ঞান চক্ষু ফোটেনি, যে দ্বীনের হালাল হারাম মুস্তাহাব ওয়াজিবকে এখনো চেনে না, (নবম ইমামের বয়স সে সময় নয় বছর ছিল) সুতরাং যদি কিছু অপেক্ষা করতেন যাতে জ্ঞান শিষ্টাচার শিখে নিত এবং কোরআন পাঠ করতো, হালাল হারামকে বুঝতো। মামুন বললেন : আল্লাহর প্রতি তাঁর রাসুল সুন্নাত হুকুম আহকামের ক্ষেত্রে সে এখনো তোমাদের চেয়ে বেশি পণ্ডিত জ্ঞানী। সে তোমাদের চেয়ে আল্লাহর কোরআনকে উত্তমরূপে পড়ে জানে এর মুহকাম মুতাশাবিহ, নাসেখ মানসুখ, যাহের বাতেন, খাস আম, তানযীল তাবীল সব বিষয়ে তোমাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী। তাকে প্রশ্ন করো। যদি ব্যাপার এমন হয় যেমনটা তোমরা বলছ, তাহলে তোমাদের কথা মেনে নিব

তারা সেখান থেকে চলে গেল এবং ইয়াহিয়া ইবনে আকসামের কাছে গেল যে সে সময়ে ছিল প্রধান বিচারপতি। তারা তার কাছে তাদের দরকারি কথাটি বললো এবং তাকে নানা উপঢৌকনের প্রলোভন দেখালো যাতে আবু জাফর (.) এর মোকাবেলায় উপায় খুঁজে বের করে। তারা তাঁকে এমন এক মাসআলা জিজ্ঞেস করতে বলল যার উত্তর তাঁর জানা না থাকে

যখন সবাই উপস্থিত হলো এবং নবম ইমামও উপস্থিত হলেন, তারা বললো : হে আমীরুল মুমিনীন! হলো বিচারপতি। যদি অনুমতি দেন, সে প্রশ্ন করবে! মামুন বললেন : হে ইয়াহিয়া! একটি ফেকহি মাসআলা আবু জাফরের কাছে জিজ্ঞেস করো যাতে বুঝতে পারো তার ফেকাহর জ্ঞান কোন্ স্তরে

ইয়াহিয়া বললো : হে আবু জাফর! আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দিন। (হজের সময় পশু শিকার নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও) ইহরাম পরিধানকারী বা সেই ইহরামকারীর ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি যে কোন শিকার হত্যা করেছে তথা পশু শিকার করেছে? ইমাম বললেন : শিকারটিকে হিল্লা (হারামের বাইরে) হত্যা করেছে নাকি হারামের (কাবার চারপাশের নিষিদ্ধ সীমার) মধ্যে? সে মাসআলা জানতো নাকি অজ্ঞ ছিল? ইচ্ছাকৃত হত্যা করেছে নাকি ভুলবশত? সে ইহরামকারী গোলাম ছিল নাকি আজাদ (মুক্ত)? ছোট (অপ্রাপ্তবয়স্ক) ছিল নাকি বড়? এটা তার প্রথম শিকার ছিল নাকি ইতোপূর্বেও সে শিকার করেছিল? শিকারটি কি পাখি ছিল নাকি অন্য কিছু? ছোট পাখি ছিল নাকি বড় পাখি? ইহরামকারী কি পুনরায় শিকার করার জেদ পোষণ করে নাকি অনুতপ্ত? শিকার রাতের বেলায় পাখিদের বাসা থেকে ছিল নাকি দিনের আলোয় প্রকাশ্যে? ইহরাম হজের জন্যে বেঁধে ছিল নাকি ওমরাহর জন্যে? বলা হয় যে ইয়াহিয়া এমনভাবে হতভম্ব হয়ে গেল যে সবার কাছে তা প্রকাশ হয়ে পড়লো। সবাই নবম ইমামের মাথা ঘুরে আসা উত্তরে বিস্মিত হয়ে গেল

মামুন মজলিসেই নবম ইমামকে বললেন : হে আবু জাফর! বিয়ের প্রস্তাব দাও। ইমাম বললেন : জি। তখন মামুন বললেন : প্রশংসা আল্লাহর। তাঁর নেয়ামতের স্বীকারবশত। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই তাঁর মহিমা ঘোষণা করার জন্যে। আল্লাহর দরূদ বর্ষিত হোক মুহাম্মদ তাঁর বংশধরদের ওপর যখন তাঁর স্মরণ করা হয়। পরকথা হলো আল্লাহর নির্দেশ ছিল সকল মানুষের জন্যে এই যে তাদেরকে হালালের মাধ্যমে হারাম থেকে দূর করবেন। আর একারণেই মহামহিম আল্লাহ বলেন : “তোমাদের স্বামীহীন নারীদের বিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে নিজ অনুগ্রহে তিনি তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন, আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।এরপর মুহাম্মদ ইবনে আলী আব্দুল্লাহর কন্যা উম্মুল ফযলকে বিয়ের প্রস্তাব করলেন এবং পাঁচশ দেরহাম মোহরানা তাকে দিলেন। আর আমিও তাকে তার সাথে বিয়ে দিলাম। হে আবু জাফর! কবুল করেছ? উত্তরে ইমাম বললেন : আমি বিবাহকে এই দেন মোহরেই কবুল করলাম। মামুন বিবাহ অনুষ্ঠান আয়োজন করলেন এবং বিশিষ্টজন, সাধারণ লোক, অভিজাত কর্মচারী সকলকেই পদবী অনুসারে উপহার দিলেন এবং আত্মীয়দেরকে নিজ নিজ শ্রেণী অনুযায়ী প্রাপ্য প্রদান করলেন

যখন বেশিরভাগ লোক চলে গেল তখন মামুন বললেন : হে আবা জাফর! যদি আমাদেরকে বলে দিতে এই সব ধরনের শিকারের জন্য কি কি ওয়াজিব হয়? উত্তরে ইমাম (.) বললেন : ইহরামকারী যখন হিল্লা (হারামের বাইরে) শিকারকে হত্যা করে আর শিকারটি হয় বড় প্রজাতির পাখী বিশেষ তাহলে তার ওপর ওয়াজিব হল একটি দুম্বা। আর যদি তাকে হত্যা করে হারামের মধ্যে তাহলে তার কাফফারা হবে দ্বিগুণ। আর যদি কোন পক্ষীছানাকে হিল্লা হত্যা করে তাহলে তার কাফফারা হলো সদ্য দুধ ত্যাগ করা একটি মেষশাবক। তার ওপর মূল্য ওয়াজিব নয় এবং যেহেতু এটা হারামের মধ্যে ঘটেনি। আর যদি হারামের সীমার মধ্যে হয়ে থাকে তাহলে মেষশাবক ছানার মূল্য দুটোই তার ওপর ওয়াজিব হবে। আর যদি সে শিকার কোন বন্যপ্রাণী হয়ে থাকে তাহলে জেব্রা হলো একটি গরু, আর উটপাখী হলে একটি উট কাফফারা দিতে হবে। আর যদি সক্ষম না হয় তাহলে ৬০ জন গরীবকে খাবার দিবে। আর যদি তাও না পারে তাহলে ১৮ দিন রোযা রাখবে। আর শিকার যদি গরু হয় তাহলে তার কাফফারা হবে একটি গরু। যদি সক্ষম না হয় তাহলে ৩০ জন মিসকিনকে খাবার দিবে। যদি তাও না পারে তাহলে দিন রোযা রাখবে। আর যদি হরিণ হয় তাহলে একটি দুম্বা তার ওপর ওয়াজিব হবে। যদি সক্ষম না হয় তাহলে ১০ জন মিসকিনকে খাওয়াবে। যদি তাও না পারে তাহলে দিন রোযা রাখবে। আর যদি হারামের সীমায় তাকে শিকার করে থাকে তাহলে কাফফারা হবে দ্বিগুণ এবং সেটা কাবায় পৌছাতে হবে কুরবানি করতে হবে। এটা হলো ওয়াজিব হক। যদি হজের ইহরামে থাকে তাহলে কাফফারাকে মিনায় জবেহ করবে যেখানে কুরবানি করার জায়গা রয়েছে। আর যদি ওমরাহর ইহরামে থাকে তাহলে মক্কায় এবং কাবার নিকটে। আর তার মূল্যের পরিমাণে সদকাও প্রদান করবে যাতে দ্বিগুণ হয়

তদ্রুপ যদি কোন খরগোশ বা শিয়ালকে শিকার করে, তার ওপরে একটি দুম্বা ওয়াজিব হবে এবং তার মূল্যের পরিমাণে সদকাও প্রদান করবে। আর যদি হারাম শরীফের সীমায় কোন কবুতরকে হত্যা করে তাহলে এক দেরহাম সদকা প্রদান করবে এবং আরেক দেরহাম দ্বারা খাদ্য ক্রয় করবে হারামের অন্যান্য কবুতরদের জন্যে। আর যদি হারাম ছাড়া অন্য স্থানের হয়ে থাকে তাহলে অর্ধ দেরহাম। আর যদি ডিম হয়ে থাকে তাহলে সিকি দেরহাম। আর ইহরামকারী কোন বরখেলাফ কাজ যদি অজ্ঞতাবশত কিংবা ভুলক্রমে করে থাকে তাহলে কাফফারা নেই কেবল শিকার ব্যতীত যার কাফফারা রয়েছে, অজ্ঞ থাকুক আর জানা থাকুক, ভুলক্রমে হয় আর ইচ্ছাকৃতভাবে হোক। আর দাস যদি কোন বরখেলাপ করে তাহলে তার কাফফারা পুরোপুরি তার মনিবের ওপরে। আর নাবালেগ শিশু কোন বরখেলাপ করলে তার ওপরে কিছু বর্তাবে না, আর যদি তার দ্বিতীয় বার শিকারের ঘটনা হয় তাহলে আল্লাহ তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। আর ইহরামকারী যদি অন্যকে শিকার দেখিয়ে দেয় এবং সে তাকে হত্যা করে তাহলে তার ওপর কাফফারা নেই। আর যে জেদ করে তওবা করেনি তার জন্যে দুনিয়ায় কাফফারার পরে পরকালেও রয়েছে শাস্তি। আর যদি অনুতপ্ত হয় তাহলে দুনিয়ার কাফফারার পরে পরকালে শাস্তি নেই। যদি রাত্রে পাখির বাসা থেকে ভুলক্রমে শিকার করে থাকে তাহলে তার ওপর কিছু নেই, যদি না তার মনে শিকারের সংকল্প থাকে। আর যদি ইচ্ছাকৃতভাবে শিকার করে থাকে তাহলে দিনে হোক আর রাতে হোক তার ওপরে কাফফারা বর্তাবে। আর যে হজের জন্যে ইহরাম বেঁধেছে তার উচিত কাফফারাকে মক্কায় কোরবানি করবে

বলা হয়েছে যে মামুন নির্দেশ দেন নবম ইমাম (.) থেকে বিধানগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্যে। অতঃপর তার পরিজনদের দিকে ফিরলেন যারা ইমাম (.) এর সাথে বিয়ের বিরোধী ছিল, তারপর বললেন : তোমাদের মধ্যে কেউ কি ছিল যে এরূপ উত্তর দিবে? তারা বললো : খোদার কসম! না। বিচারপতিরও সে সাধ্য ছিল না। তখন বলল : হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি তার বিষয়ে আমাদের চেয়ে বেশি অবগত। মামুন বললেন : ধিক্ তোমাদের! জান না যে এই পরিবারের সদস্যরা অন্যান্য লোকদের শ্রেণীভুক্ত নয়, জান না যে রাসুলুল্লাহ (সা.) হাসান হুসাইন (.) যখন শিশু ছিলেন তখন তাদের বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। অন্য কোন শিশুর বাইয়াত গ্রহণ করেন নি? জান না যে তাদের পিতা আলী (.) নয় বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ঈমান এনেছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর ঈমানকে গ্রহণ করেছিলেন, অন্য কোন শিশুর থেকে গ্রহণ করেননি এবং অন্য কোন শিশুকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত করেননি? জান না যে এরা একে অপরের বংশদ্ভূত, এদের শেষের জন্য হুকুম সেটাই প্রথমের জন্যে যা?##

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?