সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি ও ইমাম হোসাইন ( আঃ )
সিরিয়াবাসী এক ব্যক্তি হজ্ব অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্য মদীনায় আসলো। মসজিদে নববীতে একদিন হঠাৎ তার নজর গিয়ে পড়লো এমন এক ব্যক্তির উপর যিনি মসজিদের এক কোণে বসেছিলেন। সে ভাবতে লাগলো যে ,এ লোকটি কে ? নিকটেই দাঁড়ানো অপর এক লোককে জিজ্ঞাসা করলো ,‘ এ লোকটি কে ভাই’ ? সে বললো , তিনি হোসাইন ইবনে আলী ইবনে আবী তালিব (আঃ)’ । পূর্ব থেকেই ভিত্তিহীন মিথ্যা প্রচার-প্রপাগাণ্ডা তার মন-মগজকে (ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে) বিগড়ে রেখেছিল।
সুতরাং এ নামটি শোনার সাথে সাথেই ক্রোধ ও ক্ষোভে তার চেহারা লাল হয়ে গেল। আর সে খোদার সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে ইমাম হোসাইনের বিরুদ্ধে গালি-গালাজের বৃষ্টি বর্ষণ করতে লাগলো। অশ্রাব্য ,বিশ্রী ও কুৎসিত শব্দ ব্যবহার করে সে ইমামকে গালি দিয়ে তার অন্তরের জ্বালা মিটালো এবং তার মনের ক্ষোভ-দুঃখ প্রকাশ করলো। ইমাম হোসাইন (আঃ) তার গালাগালিতে মোটেও রাগ করলেন না , বরং অত্যন্ত ভালোবেসে ও সদ্ব্যবহারের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আল-কোরআনের সে আয়াতগুলো তেলাওয়াত করলেন ,যে আয়াতগুলোতে ভালো ব্যবহার , ক্ষমা প্রদর্শন ও মার্জনা করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কোরআনের আয়াতগুলো পাঠ করার পর ইমাম হোসাইন (আঃ) সিরিয়ার অধিবাসী সে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,‘ আমি তোমার যে কোন খেদমত ও সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছি’ । তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন ,‘ তুমি কি সিরিয়ার অধিবাসী’ ? জবাবে সে বললো ,‘ হ্যা! আমি একজন সিরিয়ার অধিবাসী’ । তখন ইমাম তাকে বললেন ,‘ সিরিয়াবাসীদের এরূপ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আমার আছে। আর আমি খব ভালোভাবে জানি ,এ দুর্ব্যবহার ও শত্রুতার কারণ কি’ ?
অতঃপর ইমাম লোকটিকে বললেন ,‘ তুমি এ শহরে একজন মুসাফির । বিদেশের বাড়িতে যদি তোমার কোন কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে তুমি আমাকে বলো। আমি তোমার যে কোন খেদমত করার জন্য প্রস্তুত আছি। আমি তোমাকে আমার মেহমান করতে চাই এবং তোমাকে পোশাক-পরিচ্ছদ ও টাকা-পয়সা ইত্যাদিও দিতে চাই’ । সিরিয়াবাসী লোকটি তার দুর্ব্যবহার ও গালিগালাজের জন্য একটা কঠোর পরিণতির অপেক্ষা করছিল। সে এমনটি কখনোই আশা করছিল না যে , তার এ অপরাধ ও ধৃষ্টতা একেবারেই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হবে। ইমামের এ সুন্দর ব্যবহার তার মধ্যে এক আত্মিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। সে নিজে নিজে বলতে লাগলো ,‘ আমার মন চায় যে , মাটি ফেটে দ্বিখন্ডিত হয়ে যাক আর আমি তাতে ঢুকে পড়ি। হায় আফসোস! নিজের অজ্ঞতার কারণে আমি যদি এ অপরাধ না করতাম! এর আগ পর্যন্ত ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চেয়ে বড় দুশমন আর কেউ ছিল না। আর এখন আমার দৃষ্টিতে ইমাম হোসাইন (আঃ) ও তাঁর পিতার চাইতে অধিক প্রিয় আর কেউ নেই’ ।( নাফশাতুল মাছদুর ,মোহাদ্দেছে কুমী ,পৃ. ৪)