হযরত জয়নাব (সা.আ.)এর অসীম সাহসিকতা

by Syed Yesin Mehedi

হযরত জয়নাব (সা.আ.)এর অসীম সাহসিকতা
‘হাল মিন নাসেরিন ইয়ানসুরনা’অর্থাৎ আমাদের সাহায্য করার কেউ আছে কি? ইমাম হোসাইনের এই কালজয়ী আহবানকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন হযরত যয়নাব(সা আ)। ইসলামের বিপ্লবী বার্তাবাহক হযরত জয়নাব(আঃ) যদি না থাকতেন তাহলে কারবালার আত্মত্যাগের কাহিনী মানুষের কাছে অজানা থেকে যেত।
ইমাম হোসাইনের (আঃ) পর আর কারো সাহস ছিল না উমাইয়াদের মুখোশ উন্মোচন করার মতো। কেবলমাত্র হযরত যয়নাব (আঃ)ই উমাইয়া শাসকদের অন্যায়গুলোকে ফাঁস করেন। যে মহীয়সী মহিলার অসম সাহসিকতা ও নির্ভীকতা আজও বিশ্বের মানুষের জন্য বিশাল শিক্ষার বিষয়। হযরত যয়নাবের মিশন তাঁর প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের মিশন অপেক্ষা আরো অধিক ভারী এবং দুঃসহ ছিল। যাঁরা বাতিলের মোকাবেলায় লড়াই করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন, তাঁরা জীবনের একটি মহত্ত¡র লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়েছেন মাত্র, কিন্তু যাঁরা বেঁচে ছিলেন তাঁদের দায়িত্ব ছিল আরো কঠিন। ক্ষমতাসীন ও নিষ্ঠূর লোকদের দাসত্বের শৃংখলাবদ্ধ চর, হত্যাকারী ও স্বৈরাচারের সামনে তিনি শান্তভাবে ঘোষনা করলেনঃ ‘হে খোদা! আপনি আমাদের পরিবারের প্রতি যে উদারতা ও মহানুভবতা দেখিয়েছেন সেজন্য আপনার প্রতি জানাই শুকরিয়া। আপনি (আমাদের পরিবারকে) দিয়েছেন নবুওয়াতের সম্মান এবং শাহাদাতের সম্মান’।
যে শহীদদের বাকশক্তি হত্যাকারীরা চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দিয়েছে, হযরত যয়নাব (সা.আ.) বেঁচে ছিলেন সেই শহীদদের না বলা কথাগূলো বলার জন্য। যদি রক্তদানের পর শহীদদের বাণী প্রচারিত না হয়, তবে ইতিহাসে তাঁদের বাণী অকথিত থেকে যেত। যদি তিনি (সা.আ.) কারবালার বাণী না পৌঁছাতেন, তবে কারবালা নীরব হয়ে যেত এবং যাদের এ বাণী প্রয়োজন তারা তা পেত না।
একারনেই হযরত যয়নাবের (সা.আ.) মিশন ছিল অনেক ভারী ও কঠিন ছিল। তাঁর বাণী হচ্ছে সকল মানুষের জন্য-যাঁরা হযরত হোসাইনের (আ.) ইন্তেকালে কান্নাকাটি করেছেন তাঁদের প্রতি, তাঁর আদর্শের অনুরাগীদের প্রতি, শ্রদ্ধাশীল তাঁদের প্রতি, যাঁরা ইমাম হোসাইনের (আ.)মতো ‘জীবন ঈমান ও জিহাদ ছাড়া আর কিছুই নয়’-এ কথার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন তাঁদের প্রতি। হযরত যয়নাবের (সা.আ.) বাণী হচ্ছে-‘আপনারা যাঁরা এ পরিবারের অর্থাৎ হযরত আলীর (আ.) পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট অথবা এ পরিবারকে সম্মান ও মান্য করেন, আপনারা যাঁরা রাসুলের (সা.) মিশনের প্রতি ঈমান স্থাপন করেছেন, আপনাদের অবশ্যই চিন্তা করতে হবে এবং সত্যকে বেছে নিতে হবে। আপনারা যে যুগে, যে বংশপরম্পরায় এবং যে দেশেই থাকুন না কেন আপনাদের অবশ্যই কারবালার শহীদদের বাণী স্মরন করতে হবে’।
কুফায় হযরত যয়নাব (আ.)এর ভাষণ-পৈশাচিক অপরাধের অচেতনতা থেকে চেতনা লাভ:
হযরত যয়নাব কুফাবাসীকে সম্বোধন করে প্রাঞ্জল ভাষায় যে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন তা মানবজাতির ইতিহাসে সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ ভাষণ সমুহের অন্যতম। তিনি বলেনঃ ‘হে জনগণ! হে বাহানার আশ্রয়গ্রহনকারীগণ! হে প্রতারণার আশ্রয়গ্রহণকারীগণ! তোমরা আমাদের জন্য ক্রন্দন করছো;তোমাদের চোখের অশ্রæ প্রবাহ যেন বন্ধ না হয়, তোমাদের বিলাপ যেন নীরব না হয়ে যায়। তোমরা হচ্ছো সে নারীর সমতুল্য যে তার সুতাকে মজবুত বুননে গেঁথে দেবার পর আবার তা খুলে ফেলেছিল, তারপর তার প্রতিটি তন্তুকে আলাদা করে ফেলেছিল। তোমরা তোমাদের ঈমানের সুত্রকে ছিন্ন করে ফেলেছো এবং তোমাদের মুল কুফরে ফিরে গিয়েছ। তোমরা কি তোমাদের শপথের ব্যাপারে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাও? তোমাদের কাছ থেকে মিথ্যা দাবী, রিয়াকারী কলুষতা, চাটুকারিতা, হীনতা-নীচতা আর কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছুই আশা করা যায়না। হে লোকেরা! তোমরা আবর্জনার স্তুপে জন্মগ্রহণকারী উদ্ভিদের ন্যায় অথবা এমন রৌপ্য ও চক-পাথর সমতুল্য যার ওপরে আলকাতরা লেপন করা হয়েছে। আর তোমাদের পরকালের জন্য খুবই খারাপ পাথেয় প্রেরণ করেছ। তোমাদের উপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিপতিত হোক। তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব প্রস্তুত হয়ে আছে যেখানে তোমরা চিরদিন থাকবে। হে কুফাবাসী! তোমরা কি আমাদের জন্য ক্রন্দন ও বিলাপ করছো? আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি তোমরা অনেক বেশী কাঁদো এবং খুব কম হাসো। কারণ তোমরা নিজেদের জন্য চিরন্তন অপরাধ ও লজ্জাবোধ রেখে এসেছো এবং চিরন্তন লাঞ্ছনা খরিদ করছো। তোমরা কোনোদিনই নিজেদের থেকে এ লাঞ্ছনা দূর করতে সক্ষম হবে না। আর কোন পানি দ্বারাই তা ধুয়ে সাফ করতে পারবে না। তোমরা কি দিয়ে (এ লাঞ্ছনা ও লজ্জাকে) ধুয়ে ফেলবে?কোন কাজের দ্বারা এর ক্ষতিপুরণ করবে? হোসাইন হচ্ছেন খাতামুন্নাবিয়্যিনের কলিজার টুকরা, বেহেশতের যুবকদের নেতা;তোমরা তাঁকেই হত্যা করেছো। তিনি ছিলেন তোমাদের সেরা মানুষদের আশ্রয়স্থল। যে কোন অবস্থায়, যে কোন ঘটনায় তোমরা তাঁর নিকট আশ্রয় নিতে;তিনি তোমাদের ঐতিহ্যকে বাস্তবায়ন করতেন। তোমরা তাঁর নিকট থেকে ধর্ম ও শরীয়তের শিক্ষা গ্রহণ করতে। হে লোকেরা! তোমরা অত্যন্ত খারাপ ধরনের পাপাচারে জড়িয়ে পড়েছ। আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে গিয়েছ। তোমাদের চেষ্টা-সাধনায় আর কি ফায়দা! তোমরা দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতিতে নিমজ্জিত হয়েছ। তোমরা আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত হয়ে গেছো এবং তোমাদের নিজেদের জন্য নিক্ষ্টৃ আবাসস্থল ক্রয় করেছ। তোমাদের জন্য আফসোস, হে কুফার জনগণ! তোমরা হযরত রাসুল্লাহর (সা.) কলিজার টুকরাকে ছিন্নভিন্ন করেছো এবং তাঁর পরিবারের পর্দানশীনা নারীদেরকে পর্দার বাইরে নিয়ে এসেছো। আল্লাহতা’য়ালার মনোনীত ব্যক্তির (রাসুল সা. এর) সন্তানদের থেকে কতই না রক্ত প্রবাহিত করেছ! হে জনগণ! তোমরা অত্যন্ত নিক্ষ্টৃ ও জঘন্য কাজ করেছ-যার কদর্যতা আসমান ও জমিনকে আবৃত করে ফেলেছে। তোমরা কি এতে বিস্মিত হয়েছ যে, আসমান থেকে রক্ত বৃষ্টি হয়েছে! অবশ্য আখেরাতের শাস্তি তোমাদেরকে অধিকতর লাঞ্ছিত করবে এবং তখন কেউ তোমাদের সাহায্য করতে পারবে না। আল্লাহতা’য়ালা যে অবকাশ দিয়েছেন, সে কারণে তোমাদের আরামে নিঃশ্বাস ফেলার কোন কারণ নেই। কারণ আল্লাহ’তায়ালা পাপাচারীদের শাস্তিদানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করেন না এবং কালের প্রবাহে প্রতিশোধ গ্রহণের বিষয়টি পিছিয়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হন না। তোমাদের রব পাপাচারীদের প্রতি দৃষ্টি রাখছেন’।
হযরত যয়নাব (আ.)এর এ ভাষণ কুফার জনগণের অন্তরে তীব্র দংশন সৃষ্টি করে; তারা বুঝতে পারে যে, তারা এমন এক প্শৈাচিক অপরাধ করেছে মানবজাতীর ইতিহাসে যার দৃষ্টান্ত নেই। এ ভাষণ তাদের অচেতন অবস্থা থেকে সচেতন করে তোলে। ফলে অচিরেই ইয়াযিদী জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিপ্লব সংগঠনের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। পরবর্তীকালে ‘মুখতারের অভ্যুত্থান’ নামে খ্যাত অভ্যুত্থানের প্রচন্ড আঘাতে জালিমদের প্রাসাদ ধসে পড়ে।
হযরত যয়নাবের(আঃ) অসীম সাহসিকতার প্রচন্ড বিস্ফোরণ:
হযরত যয়নাবসহ(আঃ) আহলে বাইতের বন্দিদেরকে কুফায় ইয়াযীদের নিয়োজিত আমীর ওবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হযরত যয়নাব ও ইবনে যিয়াদের মধ্যে বাকযুদ্ধ সংগঠিত হয় কার্যত তাতেই ইবনে যিয়াদের পতন নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ, হযরত যয়নাব তাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং তার স্বরূপ সর্বসমক্ষে উন্মুক্ত করে দেন। ফলে মনের দিক থেকে সকলেই তাঁর বিরুদ্ধে চলে যায়। ইবনে যিয়াদ যয়নাবকে চিনতে পেরে তাঁকে ব্যঙ্গ-বিদ্রæপ করে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে। ইবনে যিয়াদ বলেঃ’সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তোমাদের লাঞ্ছিত করেছেন এবং তোমাদের পুরুষদের হত্যা করেছেন, আর তোমাদের বাগাড়ম্বরকে মিথ্যা প্রমাণ করেছেন’।
সাথে সাথেই হযরত যয়নাব উত্তর দিলেনঃ ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর নবী মুহাম্মাদ(সাঃ)এর বদৌলতে আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন এবং আমাদের সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করেছেন (সুরা আহযাব: ৩৩)।
অবশ্যই ফাসেক লাঞ্ছিত হবে এবং ফাজের (পাপাচারী) মিথ্যা বলছে;আর সে ব্যক্তি আমরা ছাড়া অন্য। তাই সকল প্রশংসা আল্লাহর’।
ইবনে যিয়াদ এধরনের জবাবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলনা। তাই এভাবে লাঞ্ছিত হয়ে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং হযরত যয়নাবকে যেকোন ভাবে লাঞ্ছিত করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এবার ইবনে যিয়াদ নতুন করে বিদ্রæপবান ছুড়ে দিল: আল্লাহ তোমার ভাইয়ের সাথে যে আচরণ করলেন তা কেমন দেখলে?সে খলিফা ইয়াযিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, তাই আল্লাহ তাকে হতাশ করলেন এবং ইয়াযিদকে সাহায্য করলেন’।
জবাবে হযরত যয়নাব বললেনঃ’আমরা এতে উত্তম ছাড়া কিছু দেখিনি। আল্লাহতা’য়ালা আমার ভাইকে শাহাদাতের মর্যাদায় পৌছিয়ে তাকে সম্মানিত করেছেন। আমার ভাই সবচেয়ে বড় সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছেন, আর তা হচ্ছে তাঁর রাস্তায় নিহত হওয়া। আল্লাহর পক্ষ থেকে এর চেয়ে উত্তম কেনা-বেচা আর কি হতে পারে?আল্লাহ তাদের জন্য শাহাদাত নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তোমাকে এবং তুমি যাঁদেরকে হত্যা করেছ তাঁদেরকে খুব শীঘ্রই আল্লাহতা’য়ালা বিচারের জন্য হাজির করবেন। অতএব জবাব দেবার জন্য প্রস্তুত হও। কি জবাব দেবে সেদিন?সেদিনের জন্য উদ্বিগ্ন হও। কে সেদিন জয়ী ও সফল হবে, হে যেনাকারিনীর পুত্র’(ঐতিহাসিকগন সবাই একমত যে ইবনে যিয়াদ ছিলেন তার মায়ের যারজ সন্তান)।
এতে ইবনে যিয়াদ তীরবিদ্ধ নেকড়ের মত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। কিন্তু দেয়ার মত কোন জবাব তার কাছে ছিল না। তাই চরম নির্লজ্জতার সাথে সে বললঃ’আমার অন্তর শীতল হয়েছে, আমি খুশী হয়েছি। কারন, আমি যা চেয়েছি তা পেয়েছি’।
জবাবে হযরত যয়নাব বললেনঃ‘তুমি দুনিয়ার দ্বারা নেশাগ্রস্ত, প্রতারিত ও ফিতনা হগ্রস্ত। কিন্তু তোমার এ আধিপত্য টিকে থাকবে না, বরং শীঘ্রই বিলুপ্ত হবে। তুমি কি মনে করেছ যে হোসাইনের পরে তুমি আনন্দের সাথে পৃ্থবিীতে চিরদিন টিকে থাকবে?তুমি কি মনে করেছ যে, স্বস্তিতে থাকবে?কখনো নয়;তুমি স্বস্তির মুখ দেখবে না। তুমি তোমার অভীষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হতে পারবে না। হে ইবনে যিয়াদ! তুমি নিজ হাতে নিজের উপর যে কলঙ্ক লেপন করেছ তা অনন্তকাল পর্যন্ত থেকে যাবে’।
এতে দিশেহারা, অস্থির ও ক্ষিপ্ত হয়ে ইবনে যিয়াদ চিৎকার করে উঠলোঃ‘আমাকে এ নারীর হাত থেকে মুক্তি দাও;ওদেরকে কারাগারে নিয়ে যাও’।
যয়নাব (সা আ)-ইয়াযিদের দরবারে:
হযরত যয়নাবসহ বন্দিদেরকে ইয়াযিদের দরবারে হাজির করার আগেই ইয়াযিদের সামনে হযরত ইমাম হোসাইনের(আঃ) কর্তিত মাথা পেশ করা হয়। বন্দিরা যখন দরবারে প্রবেশ করে তখন ইয়াযিদ ও তার পরিষদবরর্গ হাসি-ঠাট্টায় মশগুল ছিল। হযরত ইমামের শিরের প্রতি চোখ পড়তেই নিজের অজান্তেই ফরিয়াদ করে উঠেনঃ ‘হায় আমার প্রিয়! হায় মক্কা তনয়ের অন্তরের ফসল! হায় মুস্তাফা-তনয়ার পুত্র! ………….’
হযরত যয়নাবের গগনবিদারী ফরিয়াদে মুহুর্তের মধ্যে ইয়াযিদী মজলিসের হাসি-আনন্দ নিভে যায়। ইয়াযিদ কুরানের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়। অতঃপর হযরত যয়নাব ও ইয়াযিদের মধ্যে কিছুক্ষন বাকযুদ্ধ চলে এবং এ বাকযুদ্ধে হযরত যয়নাবের কথায় ইয়াযিদ চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়। ইয়াযিদের দরবারে হযরত যয়নাবের ভাষণের কিছুটা অংশ নিম্নরূপ:
“ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামিন ওয়া সাল্লাল্লাহু ‘আলা রাসুলিহি ওয়া আলিহি আজমা’ঈন। পরম প্রমুক্ত আল্লাহতা’য়ালা সত্য বলেছেন। যারা খারাপ কাজ করেছে তাদের পরিণতি এই হয়েছে যে, তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং তা নিয়ে উপহাস করেছে। হে ইয়াযিদ! তুমি কি মনে করেছ যে, তুমি এমনভাবে আমাদের জন্য ভু-পৃষ্ঠের সকল জায়গাকে ও আকাশের দিগন্তসমুহকে রুদ্ধ করে দিয়েছ যে, অতপর আমরা ক্রীতদাস-দাসীদের মতো অসহায় হয়ে পড়েছি এবং এজন্যই যেদিকে খুশী টেনে নিয়ে যাচ্ছ?তুমি কি মনে করেছ যে, আমরা আল্লাহর নিকট তুচ্ছ, আর তুমি সম্মানিত এবং আমাদের ওপরে তোমার বিজয়ের কারণে তুমি তাঁর নিকট মর্যাদার অধিকারী?এ কারণে কি তুমি তোমার নাসিকা উঁচু করেছ ও অহঙ্কার করেছ এবং আনন্দে আত্মগৌব করছো যেন গোটা পৃথিবী তোমার ধনুকের আওতার মধ্যে এবং তোমার সকল কাজকর্মকে সুন্দর ও চমৎকার মনে করছো?আমাদের শাসন-কর্তৃত্ব (তোমার হাতে গিয়ে) তোমাকে সুখে নিমজ্জিত করেছে;ধীরে ধীরে তুমি মহিমান্বিত মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর সেই বাণী ভুলে গিয়েছ: কাফেররা যেন মনে না করে যে, আমরা যে তাদেরকে অবকাশ দিয়েছি তা তাদের নিজেদের জন্য কল্যানকর। বরং আমরা তাদেরকে এজন্যই অবকাশ দিচ্ছি যাতে তাদের পাপসমুহ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের জন্য অপমানজনক শাস্তি অবধারিত হয়ে যায় (সুরা আলে-ইমরান: ১৭৮)। ……..
মনে রেখ, জালেমদের ওপর আল্লাহর লা’নত। অতএব, সমস্ত প্রশংসা জগতসমুহের রব আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের অগ্রবর্তীদের জন্য সৌভাগ্য ও ক্ষমার পরিণতি দিয়েছেন এবং আমাদের মধ্যকার অনুবর্তীদেরকে শাহাদাত ও রহমতের পরিণতি দিয়েছেন। আমরা আল্লাহর নিকট দোয়া করি, তিনি তাদের শুভ প্রতিদান পুরণ করে দিন এবং তাঁদেরকে(স্বীয় অনুগ্রহ) বৃদ্ধি করে দিন এবং আমাদেরকে তাঁদের যোগ্য উত্তরাধিকারী করুন। অবশ্যই তিনি দয়াবান, প্রেমময়। আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং কতই না উত্তম অভিভাবক তিনি”
হযরত যয়নাবের (সা.আ.) এ ভাষণ ইয়াযিদের পরিষদবর্গের অনেকের মধ্যেই ভাবান্তর সৃষ্টি করে। পরে এ ভাষণ তাদের মাধ্যমে দামেশকের জনগণের মধ্যে এবং অচিরেই তৎকালীন মুসলিম জাহানের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে ও বিশাল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। কারবালার ঘটনার ১০ বছরের মধ্যে হযরত ইমাম হোসাইনের (আ.) হত্যার প্রতিশোধ গ্রহনের লক্ষ্যে উমাইয়া শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানসহ বহু বিদ্রোহ ও অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। শুধু আরব উপদ্বীপেরই ৪ লক্ষ লোক ইমাম হোসাইনের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য অভ্যুত্থান করে। বস্তুত হযরত যয়নাব (সা.আ.) এর ভাষণই উমাইয়া শাসনের ভিত্তি ধ্বংসের পথ উন্মুখ করে।

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?