ইসলামের স্বীকৃত জাফরী মাযহাব

by Shihab Iqbal

শিয়া মাজহাব মুসলিম মাজহাবগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো মাজহাব নয় মুসলিম মাযহাবগুলোর মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে যদিও সেগুলোর বেশিরভাগই কালাম শাস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং বেশিরভাগ সাধারণ মুসলমানই সেগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখেন না বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও বহু অভিন্ন বিষয় খুঁজে পাওয়া যায় যা এই মাযহাবগুলোর ঐক্যের বন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে এসব অভিন্ন বিষয়ের সংখ্যা বিভেদ সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোর তুলনায় অনেক বেশি দুঃখের বিষয় হলো মতানৈক্য সৃষ্টিকারীরা যৌথ বা অভিন্ন বিষয়গুলো যেন তুলে না ধরারই পণ করেছেন

বিভিন্ন মাযহাবের ফিকাহগত বিষয় যেমন, বিয়ে, তালাক,হজ্ব, উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক মিল রয়েছে। শিয়া ফেকাহতেও উপরোক্ত বিষয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাতের অপর মাযহাবের সঙ্গে মিল রয়েছে। মাসলামাসায়েলের মত শাখাগত বিষয় এমনকি কোনো কোনো বিষয়ের ফরজ হওয়া বা ফরজ না হওয়া নিয়ে সুন্নিদের মাজহাবগুলোর মধ্যেই অনেক মতপার্থক্য দেখা যায়, শিয়া মাজহাবও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোতে শিয়া সুন্নিদের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিলের সংখ্যাই বেশি। যেমন,

শিয়া সুন্নি উভয় মাজহাবই এক অদ্বিতীয় আল্লাহতে বিশ্বাসী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে শেষ নবী রাসূল মনে করে। কোরআনকেও অবিকৃত মনে করে উভয় মাজহাবই। উভয় মাজহাবই বিশুদ্ধ হাদীসকে মান্য করতে বলে। উভয় মাজহাবই রোজা রাখা, নামাজ কায়েম করা, যাকাত দেয়া, হজ্ব পালন, অতীতের নবীরাসূলদের স্বীকৃতি দেয়া, কিয়ামত বা পুনরুত্থাণে বিশ্বাস ইত্যাদিকে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের অংশ মনে করে

 শিয়াসুন্নি পার্থক্যের কয়েকটি দিক:

শিয়াদের প্রধান ধারা বা ১২ ইমামি শিয়া মুসলমানরা মনে করেন রাসূল (সা.)’ পর কে মুসলমানদের নেতা বা খলিফা হবেন তাতানসিসিবিষয়। অর্থাৎ মহান আল্লাহর নির্দেশে রাসূল (সা.)’ ব্যাখ্যার মাধ্যমে খলিফা বা ইমাম নির্বাচিত হবেন

অন্যদিকে সুন্নি মুসলমানরা মনে করেন এই পদে কে বসবেন তা নির্বাচন বা বেছে নেয়াম মাধ্যমে নির্ধারণযোগ্য বিষয়। শিয়া মুসলমানরা মনে করেন রাসূল (সা.)’ পবিত্র আহলে বাইত থেকেই মুসলমানদের রাসূল (সা.) পরবর্তী ইমাম বা নেতা কিংবা কোরআনের ভাষায়উলিল আমরমনোনীত হয়েছেন। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (.) তাঁর বংশে জন্ম নেয়া আরো ১১ জন ইমাম মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলের মনোনীত নেতা। হযরত ইমাম মাহদী (.) এই ১২ জন ইমামের মধ্যে সর্বশেষ ইমাম। শিয়া মুসলমানরা এই ১২ ইমামকে নিষ্পাপ মনে করেন এবং তারা কখনও ভুলও করেন না। কোনো সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষের পক্ষে বিষপান যেমন অসম্ভব বিষয়, তাঁদের জন্যও পাপ ভুল করা অসম্ভব বিষয়। পবিত্র কোরআনে সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে বিশ্বনবী (সা.)-এর আহলে বাইত সম্পর্কে বলা হয়েছে:

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

এর অর্থ: হে নবীর আহলে বাইত। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূতপবিত্র রাখতে

সুন্নি মুসলমানরাও শিয়া মুসলমানদের সব ইমামকেই শ্রদ্ধা করেন এবং তাঁদেরকে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন মুসলমান বলে মনে করেন, তাঁরা সবাই আল্লাহর মনোনীত খলিফা বা ইমাম ছিলেন বলে সুন্নি ভাইরা মনে করেন না। সুন্নি মুসলমানরা হযরত আলী (.)-কে চতুর্থ খলিফা হিসেবে সম্মান করেন। শিয়াদের দৃষ্টিতে আহলে বাইতের সদস্য বলে বিবেচিত হযরত ফাতিমা (সা.)-কে সুন্নিরাও বেহেশতী নারীদের সর্দার মনে করেন। তাঁর দুই পুত্র হযরত ইমাম হাসান হোসাইন (.)কেও বেহেশতী যুবকদের সর্দার মনে করেন সুন্নি ভাইরা। শিয়া ভাইদের ১২ জন ইমামের সবার নামই পবিত্র মদীনার মসজিদুন্নবীর ছাদসংলগ্ন বিভিন্ন বিম বা পিলারে এখনও খচিত রয়েছে। সুন্নি ভাইরাও ইমাম মাহদী (.)-কে মুসলমানদের শেষ ইমাম মনে করেন

তবে তাঁর জন্মকাল আবির্ভাব নিয়ে দুই মাজহাবের মধ্যে মতভেদ রয়েছে

শিয়া ভাইরা মনে করেন আল্লাহ মুসলমানদের জন্য সব সময়ই নেতা বা ইমামের ব্যবস্থা করেছেন। এখনও ইমাম মাহদী (.) মুসলমানদের নেতা, তবে তিনি জন্মের কিছুকাল পর অদৃশ্য অবস্থায় রয়েছেন এবং শ্রেষ্ঠ ইসলামী আইনবিদ বা ওলীয়ে ফকিহ ইমাম মাহদী (.)’ প্রতিনিধি হিসেবে মুসলমানদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার পিতা ইমাম হাসান আসকারী (.) ছিলেন মুসলমানদের ১১ তম ইমাম। উপযুক্ত সময়ে পরিবেশে ইমাম মাহদী (.) আবারও আবির্ভূত হবেন এবং হযরত ঈসা (.) হবেন তাঁর সহকারী বা সহযোগী। ইমাম মাহদী (.) সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন

সুন্নী মুসলমানরাও মনে করেন ইমাম মাহদী (.) সারা বিশ্বে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন এবং হযরত ঈসা (.) হবেন তাঁর সহকারী বা সহযোগী তবে সুন্নি মুসলমানদের অনেকেই তাঁর জন্ম এখনও হয়নি বলে মনে করেন না

সুন্নি মাজহাবের অন্যতম প্রধান ইমাম আবু হানিফা (.) মালিকি মাজহাবের প্রধান মালিক ইবনে আনাস ছিলেন শিয়া মুসলমানদের ষষ্ঠ ইমাম হযরত জাফর সাদিক (.)’ ছাত্র

অনেকের মধ্যে শিয়া ভাইদের সম্পর্কে একটা মারাত্মক ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে ভুল ধারণাটি হল, শিয়ারা হযরত আলী (.)-কে মর্যাদার দিক থেকে রাসূল (সা.)’ সমতুল্য মনে করে। কিন্তু অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। শিয়া মুসলমানরা এবং তাঁদের ইমামরাই হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সব দিক থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মনে করেন।######

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?