দাবি তুলেও সম্পন্ন না করার মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি
উল্লেখ করা হয়েছে,
“আল্লাহর নিকট এটা অতিশয় ঘৃণা ও অসন্তোষের বিষয় যে, তোমরা যা কর না তা বলে থাক।” সূরা সাফ্ফ : ৩
আল্লাহর কাছে অত্যন্ত অপছন্দনীয় ও ক্রোধের বিষয় হচ্ছে প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্তে ও তা পালন না করা। অর্থাৎ কোন কাজ সম্পন্নের প্রতিশ্রুতি দেয়া ও সে বিষয়ে বারংবার বড়াই করা সত্তে ও যদি তা সম্পন্ন করা না হয়, তাহলে আল্লাহ তাতে ভীষণ ক্রোধান্বিত হন। যদি কেউ কিছু না বলে এবং সেটা পালন নাও করে, তবে তাতে আল্লাহ তায়ালা এত অধিক পরিমাণে ক্রুদ্ধ হবেন না (হয়তো এমনটি তার অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে); কিন্তু উক্ত অসন্তুষ্টি এত অধিক মাত্রায় নয় যে, তা বড় ধরনের গুনাহ হিসেবে গণ্য হবে (যদিও তা বর্জনীয়)। দেখুন, এখানে একটি অত্যন্ত সূক্ষ ও বিবেচ্য বিষয় রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহ এভাবে প্রত্যক্ষ ও কড়া হুশিয়ারির মাধ্যমে চেয়েছেন মানুষের মধ্যে বিদ্যমান এ জাতীয় ত্রুটি ও ব্যাধি চিহ্নিত করতে; যাতে মানুষ তা নিরাময়ে উদ্যত হয়। মানুষ কখনও কখনও নিজেদের মধ্যে অসার দাবি ও উপর্যপুরি বড়াই এর মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে এবং সে এটা বুঝতেও পারে না যে এর মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে সে চরম রসাতলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আর এটাই মানুষের জন্য বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। উদাহরণস্বরূপ- মনে করুন, একজন সব সময় মুনাফেকি বা কপটতার মন্দ দিকগুলো তুলে ধরেছে এবং শুনে এসেছে যে, কপটতা ও দ্বিমুখী আচরণ অত্যন্ত জঘন্য ও নিন্দনীয় বিষয়, এমন-তেমন প্রভৃতি। কিন্তু সে নিজেই আবার এমন কিছু কাজ সম্পন্ন করে কিংবা আচরণ করে, যা কপটতা হিসেবে গণ্য। অথচ সে নিজেও হয়তো বুঝতে পারছে না যে, সে যে সব কাজ করছে সেগুলো কপটতার অন্তর্ভুক্ত; অথচ সে নিজেই এ সব কাজের সমালোচনা করে থাকে। অথবা মনে করুন, কোন বিপ্লবী সমাজের কিছু লোক এমন সমাজে বসবাস করে সা¤্রাজ্যবাদ, তাগুত কিংবা স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলে, সমালোচনা ও নিন্দা করে। কিন্তু তারাই আবার বাস্তব জীবনে এমন আচরণ ও কাজকর্ম করে থাকে, যেগুলোর বিরোধিতা ও সমালোচনা তারা নিজেরাই করেছে। অথচ তারা নিজেদের অজান্তেই ঐ সব নিন্দিত কাজগুলো সম্পন্ন করে যাচ্ছে। অবশ্য আমাদের এ বক্তব্য তাদের জন্য যারা নিজেদের অজান্তে কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ঐ সব কাজে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যারা সজ্ঞানে ও ইচ্ছা করে সাম্রাজ্যবাদী ও অমানবিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের দিকে ধাবিত হয় (সাম্রাজ্যবাদী ও তাগুতিদের কাজকর্ম আঞ্জাম দেয় কিংবা নেতিবাচক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে) তাদের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং এখানে তা আমাদের আলোচ্য বিষয়ও না।
