নামঃ মুহাম্মাদ (সা.) এবং আহমদ (সা.)। পবিত্র কুরআনে মহানবী (সা.)কে দুই নামে পরিচিত করিয়েছে। সুরা আল-ইমরান এর ১৩৮, সুরা মুহাম্মদ এর ২, সুরা ফাতহ এর ২৯ এবং সুরা আহযাবের ৪০নং আয়াতে তাঁকে “মুহাম্মদ” নামে এবং সুরা সাফের ৬নং আয়াতে তাঁকে “আহমদ” নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর এই দুই নাম থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, মহানবী (সা.) এর মা হযরত আমেনা দাদা আব্দুল মুত্তালিবের আগেই তাঁর নাম “আহমদ” রেখেছিলেন। মহানবী (সা.) শৈশব ও বাল্য থেকেই “আহমদ” ও “মুহাম্মদ” এ দু’নামে পরিচিত ছিলেন।
ডাক নামঃ আবুল কাশেম।
উপাধিঃ খাতামুল আম্বিয়া, সাইয়েদুর রাসুল।
পিতার নামঃ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব বিন হাশিম। (জন্ম ৫৪৫ খ্রঃ-মৃত্যু ৫৭০ খ্রঃ)
মাতার নামঃ আমিনা বিনতে ওয়াহাব। (জন্ম ৫৪৮ খ্রঃ-মৃত্যু ৫৭৬ খ্রঃ)
জন্ম তারিখঃ শিয়া মুহাদ্দিসদের মধ্যে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, মহানবী (সা.) হাতির বছর (আমরে ফিল), ৫৭০ বা ৫৭১ খৃষ্টাব্দ, ১৭ই রবিউল আউয়াল, শুক্রবার, ফজরের সময় (ঊষালগ্নে) পবিত্র মক্কা নগরীতে কুরাইশ বংশে হাশিম গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। আর আহলে সুন্নাতের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে তিনি ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার জন্মগ্রহণ করেন।
মহানবীর স্তন্যপানের সময়কাল ও লালন পালনঃ প্রথমে আবু লাহাবের দাসী সাভীবাহ। তিনি চার মাস স্তন্যদান করেছিলেন। পরে বনু সাদ গোত্রের হালিমা সাদিয়া। মহানবী (সা.) বনি সা’দ গোত্রের মাঝে পাঁচ বছর অতিবাহিত করেন। এই পাঁচ বছরের মধ্যে হযরত হালিমা মহানবী (সা.)কে দু’তিন বার মাত আমেনার কাছে এনেছিলেন।
মায়ের মৃত্যুঃ ৫৭৬ খ্রঃ ৬ বছর বয়সে মায়ের সাথে মদিনায় (ইয়াসরিবে) পিতার কবর জিয়ারত এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেখানে একমাস অবস্থানের পর, জিয়ারত শেষে মাক্কায় ফিরার পথে ‘আবওয়া’ নামক স্থানে মায়ের মৃত্যু। দাসী উম্মে আইমান মক্কায় নিয়ে আসলে দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে লালিত পালিত হতে থাকেন।
দাদার মৃত্যুঃ ৫৭৮ খ্রঃ মহানবী (সা.) এর আট বছর বয়সে দাদা আব্দুল মুত্তালিবের মৃত্যু হলে, তার চাচা হযরত আবু তালিব (আ.) মহানবী (সা.) এর লালন পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। হযরত আবু তালিব (আ.) আমৃত্যু অর্থাৎ মহানবী-কে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত ছায়ার মত আশ্রয় দিয়ে রাখেন।
চাচা আবু তালিবের গৃহেঃ ৫৭৮ খ্রঃ থেকে ৫৮২ খ্রঃ পর্যন্ত বয়স এর মধ্যে ৪ বছর ধরে চাচার মেষ পালন করেন। ৫৮২ খ্রঃ থেকে চাচার সথে ১২ বছর বয়সে সিরিয়ায় বাণিজ্য সফরে রওয়ানা পথিমধ্যে বুসরা নামক স্থানে পাদ্রীবাহীরা কর্তৃক নবুওয়াতের ভবিষ্যবাণী এবং বাহীবার সতর্ক পরামর্শে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে ২০/২১ বছর বয়স পর্যন্ত চাচাদের সাথে ইয়ামান, বাহরাইন, জাআশা, জারাল প্রভৃতি বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্রগুলোতে একাধিকবার সফর করেন।
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধঃ ৫৯৫ খ্রঃ ২৫ বছর বয়সে সতী সাধ্বী বিধবা নারী ৪০ বছর (জন্ম হস্তি সালের ১৫ বছর আগে) বয়স্কা হযরত খাদিজা (সা.আ.) পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব ও আবু তালিবের সম্মতিতে হযরত খাদিজা (সা.আ.) এর সাথে ৯ই শাওয়াল মাসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ। এটি হযরত খাদিজার ৩য় এবং রাসুল (সা.) এর ১ম বিবাহ। এই বিবাহে মোহরানা ছিল ৪০০ দিনার। আবার কিছু ঐতিহাসিকদের মতে ২০টি উট।
সন্তান সংখ্যাঃ হযরত খাদিজা (সা.আ.) গর্ভে মহানবী (সা.) এর ছয়টি সন্তানের জন্ম হয়। দু’টি পুত্র সন্তান হলেন কাশেম এবং আব্দুল্লাহ এবং কন্যা সন্তান চারজন হলেন-রুকাইয়া, যয়নাব, উম্মে কুলসুম এবং ফাতিমা। মহানবী (সা.) এর পুত্র সন্তানদ্বয় তাঁর নবুয়াতপ্রাপ্তির আগেই মৃত্যুবরণ করেন কিন্তু কন্যা সন্তানরা রাসুল (সা.) এর নবুওয়াতকাল প্রত্যক্ষ করেন। তাহা ছাড়া মহানবী (সা.) এর অন্য স্ত্রী মারিয়ার গর্ভে ইব্রাহীম নামক একপুত্র জন্মগ্রহণ করেন। সেইও অল্প বয়সে ইন্তেকাল করেন। এই ছাড়া মহানবী (সা.) এর পালক পুত্রের নাম ছিল যাইদ ইবনে হারেসা (রা.)।
হিরা গুহায় ধ্যানমগ্নতা শুরুঃ মহানবী (সা.) ৩ বছর ব্যাপী হেরাগুহায় ধ্যানমগ্নতা শুরু করেন।
নবুয়্যাতি জীবনঃ ৬১০ খ্রঃ ৪০ বছর বয়সে ‘বে’সাত’ বা ‘নবুওয়াতের অভিষেক’ লাভ করেন। শিয়া মুহাদ্দিসদের মধ্যে প্রসিদ্ধ অভিমত এই বছর ২৭শে রজব মহানবী (সা.) এর বে’সাত বা নবুওয়াতের অভিষিক্ত দিবস। এই দিবসে নবুওয়াতের মাকামে অভিষেক দিবসে সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত হেরাগুহায় অবতীর্ণ হয়েছিলে। ঐ দিন থেকে তাঁর নবুওয়াতে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। একই বছর একমাস পর রমযান মাসের ২৩ তারিখে “লওহে মাহফুয” (সংরক্ষিত ফলক) থেকে “বায়তুল মামুর” নামক স্থানে ‘শবে কদর’ বা ভাগ্য রজনী নামে রাতে সম্পূর্ণ কুরআন একত্রে একবারে অবতীর্ণ না নাযিল হয়। এর পর মহানবী (সা.) এর গোপন দাওয়াতের পর অর্থাৎ বে’সাতের দীর্ঘ তিন বছর পর পবিত্র কুরআনে এর আয়াত ধারাবাহিক ভাবে মহানবীর উপর নাযিল হতে থাকে। এরপর মহানবী (সা.) এর জীবনকাল ছিল ১৩ বৎসর মক্কায় এবং ১০ বৎসর মদিনায়।
চাচা আবু তালিব (আ.) এবং স্ত্রী খাদিজা (সা.আ.) ইন্তেকালঃ রাসুল (সা.) নবুয়্যতের অষ্টম হতে দশম বর্ষে (৬১৬ খ্রীঃ থেকে ৬১৯ খ্রীঃ পর্যন্ত) “শেবে অবি তালিবের উপত্যকায়” নিবার্সন জীবন এবং বয়কট অবসানের কিছু দিন পর ১০ম বর্ষে ২৬ই রবিউল আউয়াল মাসে চাচা আবু তালিব (আ.) (৮০ বৎসর বয়সে) ও ১০ই রমজান মাসে হযরত খাদিজাতুল কুবরা (সা.আ.) (৬৫ বৎসর বয়সে) ইন্তেকাল করেন।
মিরাজ গমনঃ নবুওয়াতের একাদশ বর্যে, ২৭ শে রজব ৬২০ খ্রীঃ বছরে রাসুল (সা.) এর মিরাজ সংঘটিত হয়। হযরত আবু তালিব (আ.) এর কন্যা ও হযরত আলী (আ.) এর বোন উম্মে হানী (রা.) গৃহ থেকে মহানবী (সা.) মিরাজের যাত্রা শুরু করেন।
মক্কা বিজয়ঃ ৬৩০ খ্রীঃ অষ্টম হিজরী ২ শে রমজান মক্কা বিজয় হয়।
মহানবী (সা.) এর বিদায় হজ্জ ও গাদীরে খুম এর ভাষণঃ মুহাদ্দিসগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে, মহানবী (সা.) ১০ই হিজরী ৯ই জিলহজ্জ আরাফাত ময়দানে এক লক্ষ মানুষের সাথে যোহর ও আসরের নামায আদায় করেন এবং ঐ দিন তাঁর ঐতিহাসিক বিদায় হজ্জ্বের ভাষণ প্রদান করেন এবং ১৮ই জিলহজ্জ্ব গাদীরে খুমে হযরত আলী (আ.) এর বেলায়েত বা অভিভাবকত্ব ঘোষণা দান করেন।
ইন্তেকালের তারিখঃ শিয়া মুহাদ্দিসদের মধ্যে প্রসিদ্ধ অভিমত ২৮ শে সফর একাদশ হিজরী, ৬৩২ খ্রীষ্টাব্দে, আহলে সুন্নাতের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ অভিমত ৬৩২ খ্রঃ, ২৮শে মে সোমবার, ১১ হিজরী সন, ১২ রবিউল আউয়ালের দ্বিপ্রহরের পূর্বক্ষণে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যু কালে মহানবী (সা.) এর বয়স হয়েছিল ৬২ অথবা ৬৩ বছর। ইন্তেকালের স্থান হচ্ছে মদিনা।
রওজার স্থানঃ মহানবী (সা.) যেখানে ইন্তেকাল করেন সেখানেই সমাহিত করা হয়। আর তা হলো মদিনা শহরের মসজিদুন নাবীর পার্শ্বে। এখন মসজিদের নববীর ভিতরে রাসুলের (সা.) মাজার অবস্থিত।###