ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত ইমাম হাসান ও হুসাইন ( আ) এর হত্যাকারী ইয়াজিদ

মোঃ তুরাব রসুল

by Shihab Iqbal

আহলে সুন্নতের বিখ্যাত আলেম সমাজের অভিমত ইয়াজিদের নির্দেশে ইমাম হুসাইনকে হত্যাকরা হয়েছে।কিন্তু বর্তমানে ওয়াহাবি, সালাফি যারা ভারতীয় উপমহাদেশে আহলে হাদিস নামে পরিচিত তারা এই প্রতিষ্ঠত সত্যকে শুধু অস্বীকার করে ক্ষান্ত হয়নি উল্টা ইয়াজিদ সঠিক আর ইমাম হুসাইন() ভুল পথে ছিল বলে মিথ্যা প্রচারে নিয়োজিত। তাদের মিথ্যা প্রচারে সাধারণ মুসলিমগণ বিভ্রান্তের মধ্যে নিমজ্জিত। তাই বাতিল পন্হিদের মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে জাতির সামনে তুলে ধরা নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। ইয়াজিদই ইমাম হুসাইন ( ) এর হত্যাকারী এই ঐতিহাসিক সত্যকে তুলে ধরা হলো

১। ইবনে জিয়াদের স্বীকারোক্তি :” আমি হুসাইনকে হত্যা করেছি ইয়াজিদের নির্দেশে অন্যথায় সে আমাকে হত্যা করত, সুতরাং আমি হুসাইনকে হত্যা করার বিষয়টি বেছে নিয়েছি।”( কামিল ফিতা তারিখ ৩য় খন্ড, ইবনে আসির)

২। ইয়াজিদ কুফার গভর্ণর ইবনে জিয়াদের কাছে তার ( হুসাইন) সাথে যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশনামা লিখে পাঠায়। ইবনে জিয়াদ চার হাজার লোকের সেনাবাহিনী ওমর বিন সাদ বিন আবিওয়াক্কাসের নেতৃত্বে কারবালায়

প্ররণ করে। ( তারিখে খোলাফা,জালালুদ্দিন সিউতী (.))

৪। ইবনে আব্বাসের সাক্ষী : ইয়াজিদের নির্দেশে ইমাম হুসাইনকে হত্যা করা হয়েছে ( আল কামিল ফিতা তারিখ)

৫। এটা আগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সে ( ইয়াজিদ) হুসাইনকে তার সাথীদের হত্যা করেছিল ইবনে জিয়াদের মাধ্যমে।( আল বেদানা ওয়ান নেহায়া, ইবনে কাসির)

৬। ইবনে জিয়াদ বলেআমি হুসাইনকে হত্যা করেছি এই কারণে যে, সে আমার ইমামের ( ইয়াজিদ) বিরুদ্ধে কিয়াম করেছেন আর ইমাম ( ইয়াজিদ) আমাকে হুসাইনকে হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখন এটা যদি গুনাহ হয় তবে ইয়াজিদ এই জন্যে দায়ি।”( আহমাদ বিন দাউদ কিতাব আবার আত তাউল)

৭। ইয়াজিদের নিজ সন্তান মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ যাকে দ্বিতীয় মুয়াবিয়া বলা হয়।তার বক্তব্য তার পিতা ইয়াজিদ হুসাইনকে হত্যা করেছে।( হায়াত আল হাইয়ান)

যখন ইয়াজিদের পুত্র মুয়াবিয়া বিন ইয়াজিদ সিংহাসনে বসল,তার প্রথম খুতবায় বললআমরা ইয়াজিদের খারাপ কাজের ব্যাপারে সমক জানি, সে রাসুলুল্লাহ ( সা) এর পরিবারকে হত্যা করেছে, মদকে হালাল জানত কাবাকে ব্যথিত করেছিল

ইয়াজিদের নিজ সন্তান তার পিতা ইয়াজিদকে হুসাইন( ) এর হত্যাকারী হিসাবী জানত অথচ ইয়াজিদের অবৈধ সন্তানগণ তা মানতে নারাজ আর নানা কুটতর্ক গোড়ামী করে ইয়াজিদকে বাঁচানোর চেষ্টায় তৎপর

৮।আল্লামা ইবনুল হুমাম( ) বলেন, ইয়াজিদের কুফরির ব্যাপারে উলামাগণের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে তাকেকাফেরঅভিহিত করেছেন। কারণ, তার সম্পর্কে এমন কিছু বর্ণনা রয়েছে, যা তার কাফের হওয়াকে প্রমাণ করে। যেমন বর্ণিত আছে যে সে মদকে হালাল মনে করত। হুসাইন ( রা) তাঁর সাথীদের হত্যার পর সে বলেছিল হুসাইন তাঁর সমর্থকরা বদর যুদ্ধে আমার পূর্বপুরুষদের সাথে যে আচরণ করেছিল আজ আমি তার প্রতিশোধ নিয়েছি। অথবা এরুপ আরো অন্যান্য কথাও বর্ণিত আছে। সম্ভবত ইমাম আহমদ ( ) এর নিকট সমস্ত বর্ণনা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় তিনি ইয়াজিদকে কাফের বলেছেন।( শরহে ফেকহে আকবর)

৯। আল্লামা তাফতাযানী( ) বলেনঃ আসল কথা হচ্ছে, হযরত হুসাইন ( রা) এর হত্যায় ইয়াজিদের সন্তুষ্ট হওয়া এর জন্য আনন্দ প্রকাশকরা আহলে বাইতকে লাঞ্ছিত করা অকাট্য প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত রয়েছে। যদিও তার বিবরণআখবারে আহাদএর মাধ্যমে এসেছে। ( কাস্তলানী)

১০। ইয়াজিদকে ইমাম হুসাইনর ( রা)হত্যাকারী এবং লানতের যোগ্য বড় ফ্যাসাদ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন, ইমাম আহমদ () বলেন :ইমাম হুসাইন ( রা) কে হত্যার চেয়ে বড় আর কোন ফ্যাসাদ হতে পারে কি? (আল মুতামিদ ফিল উসুল, আল্লামা ইবনুল জাওজি কাজী আবু ইয়ালা থেকে বর্ণনাকরেছেন। আসসাওয়ায়েকুল মুহরিকাহ)

বক্তব্য থেকে পরিস্কার যে, ইমাম আহমদের মতে ইয়াজিদই ইমাম হুসাইন( ) এর হত্যাকারী। কারণ তিনি ইয়াজিদকে মহাবিপর্যয় হিসাবে অভিহিত করেছেন। চাই তার সরাসরি নির্দেশের মাধ্যমে হোক বা হত্যার সাথে তার সম্মতির মাধ্যমে হোক। উভয় অবস্হায় ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন ( ) এর হত্যাকারী। দৃষ্টিকোণথেকে আল্লামা ইবনে কাসির ইয়াজিদকে ইমাম হুসাইন ( ) এর হত্যাকারী সাব্যস্ত করেছেন

১১।ইবনে আবিদ দুনিয়া আবুল ওয়ালিদ হতে তিনি খালেদ থেকে তিনি আম্মার দুহানো হতে বর্ণনা করেছেন যে হযরত জাফর বলেনইমাম হুসাইন ( রা) এর মাথা যখন ইয়াজিদের সামনে রাখা হলো, আবু বার যাহ আসলামী( রা) সেখানে গিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তখন ইয়াজিদ একটি লাঠি দ্বারা হযরত হুসাইন ( রা) এর মুখমন্ডলে আঘাত করতে লাগলো আবু বার যাহ আসলামী( রা) তখন ইয়াজিদকে বললেন তোমার লাঠি সরাও! আমি রাসুলুল্লাহ( সা) কে এই জায়গায় চুমু দিতে দেখেছি। ( আল বেদায়া)

আহলে সুন্নতের এসব বিখ্যাত আলেমগণের সাক্ষ্য যে ইয়াজিদ () ইমাম হুসাইন ( ) এর হত্যাকারী। তারপরও যারা ইয়াজিদের পক্ষে সাফাই গায় নিসন্দেহে তারা জালিম, ফাসেক, ফাজের,মুনাফেক

আমার মনে হয় এসব ইয়াজিদ পন্থী মুনাফেকদের সম্পর্কে ফতহুল বারী যা বুখারীশরীফের ব্যাখ্যাকারক ইবনে হাজার আসকালানী () বলেন :’ ইয়াজিদের প্রতি ভালবাসা রাখা তার গণকীর্তন করা কেবল বেদাতি বাতিল আকিদাধারীর পক্ষেই সম্ভব। কারণ ইয়াজিদের ভেতর এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যেজন্য কেউ তাকে ভালবাসলে তার বেইমান হয়ে যাওয়া আবশ্যক হয়ে যায়। করণ শুধু আল্লাহর জন্য ভালবাসা শুধু তার জন্য ঘৃণা করা উভয়ই ইমানের অন্তর্ভুক্ত।’ ( আল ইমতা বিল আরবাইন আল মুতাবাইনাতুস সামা ইয়াজিদের নিন্দা করার বৈধতা বিরুদ্ধবাদীদের যুক্তি খন্ডন,)

১২। ইয়াজিদ শুধু ইমাম হুসাইন ( ) এরই হত্যাকারী নয় সে ইমাম হাসানকেও( ) বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করে। প্রসঙ্গে আহলে সুন্নতের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আবদুল হক হাক্কানী বলেন, হযরত হাসান ( রা) পর হজরত মুয়াবিয়া রাষ্ট্র পরিচালনা করতে থাকেন। তার তিরোধানের পর তার পুত্র হতভাগা ইয়াজিদ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। অযোগ্য স্বার্থবাদী লোকটি হযরত হাসানকে( রা) বিষ প্রয়োগ করে শহীদ করে ফেলে। কেননা তার আশংকা ছিল, হুজুর ( সা) এর আদরের দুলাল হযরত হাসান খেলাফতের দাবি করে বসলে হাসানের মুকাবিলায় কে তাকে জিজ্ঞেস করবে, কে তার মূল্য দিবে? কয়েক বছর পর সে হযরত হুসাইনকে( রা) কার বালার প্রান্তে নির্মমভাবে শহীদ করে দেয়। এহেন দুরাচারী লোকটির ধর্মহীন হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ আছে কি?( আকায়েদে ইসলাম খেলাফত রাজতন্ত্র গ্রন্হের ওপর অভিযোগের পর্যালোচনা)

১৩। সুনানে আবু দাউদের কিতাবুল আদাব অধ্যায়ের হাদিসে হাসানের( ) মৃত্যুর সংবাদে মুয়াবিয়ার মনোভাবের কথা বর্ণিত আছেসেই হাদিসের ব্যাখ্যায় মাওলানা শামসুল হোক আযীমাবাদীউনুলমাবুদগ্রন্হে লিখেছেন বিষ প্রয়োগে হজরত হাসানের( রা) মৃত্যু ঘটে। তাঁর স্ত্রী জাদাহ ইয়াজিদের ইশারায় তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে। ( খেলাফত রাজতন্ত্র গ্রন্হের ওপর অভিযোগের পর্যালোচনা)

১৪। ইবনে হাজার () আসসাওয়েকে মহরিকা কিতাবে লিখেছেন, ইয়াজিদ জাদাহকে এক লাখ দিরহাম (ঘুষ) দিয়ে হযরত হাসানকে( রা) বিষ প্রয়োগ করায়।()

১৫।বিষ প্রয়োগের ঘটনা শাহ আবদুল আযীয() সিররুশ শাহাদাতাইন গ্রন্হে একইভাবে বর্ণনা করেছেন।()

অতএব আহলে সুন্নতের বিশিষ্ট উলামাদের দৃষ্টি কোন থেকে প্রমাণিত যে ইয়াজিদই ইমাম হাসান হুসাইন ( ) এর হত্যাকারী এটা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত। ইবনে হাজার( ) এর ভাষায় শুধ বেদাতি বাতিল আকিদাধারীগণ এই সত্যকে অস্বীকার করে

হে আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতের যুবকদের নেতা ইমাম হাসনাইন( ) তাদের নানা রাসুলুল্লাহ ( সা) এর সিরাত সুন্নতের পথে কায়েম রাখ। এলাহী আমিন

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?