তওবার কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত?

by Syed Yesin Mehedi

তওবার কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত?
ইসলামে তওবা হল পাপ থেকে নিজেকে পরিষ্কার করার, জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করার এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক শক্তিশালী করার একটি উপায়। সঠিকভাবে এবং সময়মতো তওবা করলে আত্মিক উন্নিত এবং আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভ করা যায়।
ইসলামী আইনে তওবা হচ্ছে, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। এটি আল্লাহ’র পথে ফিরে আসার এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। নবী (সাঃ) ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের বর্ণনায় এবং কুরআনের আয়াতে তাওবার বৈশিষ্ট্যগুলি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এবারে আমরা তওবার কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করবো:
আন্তরিক অনুশোচনা এবং বিশুদ্ধ নিয়্যেত: তওবা একেবারে হৃদয় থেকে আসতে হবে এবং সম্পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে করতে হবে। পাপের জন্য আন্তরিক অনুশোচনা হল তওবার প্রথম ধাপ। মহানবী (সা.)-এর উত্তরসূরী ইমাম আলী (আ.) বলেছেন: “তওবা হলো অন্তরে অনুতাপ করা, জিহŸা দিয়ে ক্ষমা চাওয়া, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে ত্যাগ করা এবং এটা মনে রাখা যে ওই পাপ আর ফিরে আসবে না। ”
তওবার মধ্যে রয়েছে: অন্তরে অনুশোচনা, জিহŸা দিয়ে ক্ষমা চাওয়া, কর্মের মাধ্যমে পাপ ত্যাগ করা এবং পুনরায় পাপ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া। [গার আল-হিকাম: ২০৭২]।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, তওবা একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া যার মধ্যে রয়েছে অনুশোচনা করা, জিহ্বা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং কাজেকর্মে পাপ ত্যাগ করা।
পাপে ফিরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত: অতীতের পাপ মোচন এবং সংশোধন কেবল তখনই সম্পূর্ণ হয় যখন একজন ব্যক্তি পাপ ত্যাগ করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়।
হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পাপ কাজ থেকে তওবা করে সে যেন কোন পাপই করেনি।”
যে ব্যক্তি পাপ থেকে তওবা করে, সে এমন একজনের মতো যে কোন পাপ করেনি। [কানযুল-আমাল: ১০১৭৪]।
এই হাদিসগুলো অতীতের পাপ এড়াতে এবং সেগুলোতে ফিরে না যাওয়ার ইচ্ছার গুরুত্ব নির্দেশ করে।
মানুষের অধিকার পূরণ করা: যদি কোন পাপের সাথে মানবাধিকার বা অন্যের অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি জড়িত থাকে, তাহলে অধিকার ফিরিয়ে দেয়াকে তওবার অন্যতম প্রধান শর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইমাম সাদিক (আ.) বলেন: “মুমিনের অধিকার আদায়ের চেয়ে উত্তম আর কোন ইবাদত আল্লাহর কাছে নেই।” [বিহার, খন্ড।] ৭৪, পৃ. ২৪২]।
ইসলামে মানবাধিকারের স্থান অনেক উঁচু এবং এগুলোর সংশোধন না করলে তওবা অসম্পূর্ণ থাকবে।
সৎকর্ম এবং অতীতের ক্ষতিপূরণ: সৎকর্ম সম্পাদন করা এবং অতীতের ভুল সংশোধন করা তওবার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
বিলম্ব ছাড়াই তাৎক্ষণিক তওবা: তওবা বিলম্বিত করলে শুধু যে পাপই বৃদ্ধি পেতে পারে তাই নয় একইসাথে প্রকৃত তওবার সম্ভাবনাও কমে যেতে পারে। বিলম্বে তওবা করা একধরনের অহংকার এবং অজ্ঞতা।
তওবার প্রভাব এবং আশীর্বাদ: অতীতের পাপ শুদ্ধ করার পাশাপাশি, তওবা ব্যক্তির হৃদয়ের স্বস্তি এবং আধ্যাত্মিক প্রশান্তি নিয়ে আসে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন যে, যারা তওবা করে, তিনি অনুশোচনা কবুল করবেন এবং তাদের তাঁর রহমতের অন্তর্ভুক্ত করবেন। সূরা আয-যুমারের ৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেন।” বলুন: হে আমার বান্দারা, তোমরা নিজেদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছ! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, কারণ আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেন। কারণ তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও করুণাময়।
এই ঐশি প্রতিশ্রুতি মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আশা সৃষ্টি করে।

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?