যিয়ারতে আশুরা’র আদবসমূহ

by Syed Yesin Mehedi

ইমাম হুসাইন (আ.) এর যিয়ারতের প্রস্তুতি ও আদব: হযরত ইমাম সাদেক (আ.) হতে বর্ণিত: যখনই ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত করার ইচ্ছা করবে, নিজেকে রাখবে ব্যথিত, শোকাবহ, মাথার চুল এলোমেলো, ধূলিময়, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায়। কেননা, তিনি শহীদ হয়েছিলেন এই অবস্থাতেই।
এরপর নিজের প্রয়োজনীয় চাহিদা (দোয়া) করো। যিয়ারতের সময় খাবার পরিবেশন করলে সাধারণ খাবার রাখবে Ñ কখনোই বিরিয়ানি, হালুয়া বা ভুনা গোশতের মতো খাবার পরিবেশন করবে না। বরং রুটি, লবণ, দুধ বা দই রাখবে।
যিয়ারতের গভীরতা ও ভাব: ইমাম সাদেক (আ.) মোফাজ্জল ইবনে ওমরকে বলেন:
“ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত করো, কিন্তু তার চেয়েও ভালো হলো Ñ যিয়ারত না করে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ রাখা।”
মোফাজ্জল বললেন: “আপনি তো আমার পিঠ ভেঙে দিলেন!”
ইমাম বললেন: “খোদার কসম, যখন তোমরা পিতা-মাতার কবর যিয়ারত করো, তখন শোকার্ত থাকো। কিন্তু হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারতে গিয়ে বড় আয়োজন করো, দস্তরখান সাজাও। বরং উচিত হলোÑ এলোমেলো চুলে, ধূলিমাখা অবস্থায় যাওয়া।”
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিবারের শোক পালনের দৃষ্টান্ত: শেখ কুলাইনি বর্ণনা করেন: ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতের পর তাঁর স্ত্রী (কালবিয়্যা) মাতমের আয়োজন করেন। তিনি ও তার সঙ্গীরা এত কেঁদেছিলেন যে চোখের অশ্রæ শুকিয়ে যায়।
এক ব্যক্তি তাঁর জন্য উপহার হিসেবে “জুনি” (মোরগসহ খাবার) পাঠায় যাতে কিছু খেয়ে কাঁদার শক্তি পান।
তিনি বললেন: “আমরা তো বিয়ের অনুষ্ঠানে আসিনি; এই খাবার দিয়ে কী করবো?”
অতঃপর, তিনি সেই খাবার সরিয়ে দিতে বলেন।
যিয়ারতে আশুরার মর্যাদা ও পদ্ধতি: যিয়ারতে আশুরা মারুফা এমন একটি দোয়া, যা কাছ থেকে ও দূর থেকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়।
শেখ আবু জাফর তুসি তাঁর “মিসবাহ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন:
হযরত ইমাম মোহাম্মদ বাকের (আ.) বলেন: যে ব্যক্তি ১০ মহররম (আশুরা) ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যিয়ারত করতে চায়, এবং তাঁর কবরের পাশে কান্নাকাটি করতে চায়, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে, এমন সওয়াব নিয়ে Ñ
যা ২০০০টি হজ্ব, ২০০০টি ওমরা এবং ২০০০টি জিহাদের সমতুল্য, যা রাসূল (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের সাথে সম্পন্ন হয়েছে।
রাবি বলেন: “আমি বললাম, যারা কারবালার বাইরে অবস্থান করে এবং যিয়ারতে যেতে পারে না, তাদের জন্য কী আছে?”
ইমাম বলেন: তারা যেন মরুভ‚মিতে বা বাড়ির ছাদে উঠে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কবরের দিকে ইশারা করে সালাম দেয়।
তাঁর হত্যাকারীদের উপর লানত পাঠ করে।
সূর্য যাওয়ালের আগেই দু’রাকাত নামায আদায় করে।
নিজে কাঁদে, ঘরের লোকদেরকে কাঁদতে বলে।
ঘরে আযাদারির ব্যবস্থা করে, শোক প্রকাশ করে।
এবং পরস্পরকে সমবেদনা জানায় এই বাক্যে: “ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মুসিবতের জন্য আল্লাহ আমাদের সওয়াব বৃদ্ধি করুন এবং আমাদেরকে ও আপনাদেরকে আলে মুহাম্মদ (সা.) থেকে ইমাম মাহদি (আ.ফা)-এর নেতৃত্বে তাঁর রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।”
সূত্র: মাফাতিহুল জিনান, শেখ আব্বাস কুম্মি

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?