বাহ্যিক নয়, আত্মিক পবিত্রতা

মন থেকে হিংসা ও কুধারণা দূর করার উপায়

by Syed Yesin Mehedi

ইসলামে পবিত্রতা (তাহারাত)-এর গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা ওজু ও গোসলের মাধ্যমে নামাজ বা অন্যান্য ইবাদতের জন্য বাহ্যিকভাবে পবিত্রতা অর্জন করি। কিন্তু ইসলামী নৈতিকতা (আখলাক) জোর দেয় আত্মিক পবিত্রতা-এর উপর। হিংসা (হাসাদ), বিদ্বেষ, ঘৃণা, অহংকার এবং অন্যের প্রতি কুধারণা  হলো মনের সেই অপবিত্রতা যা একজন মুমিনের ইবাদতকে বৃথা করে দিতে পারে। এই আত্মিক ব্যাধিগুলি দূর না হলে, বাহ্যিক পবিত্রতা অপূর্ণ থেকে যায়।
আহলে বাইত (আঃ)-এর শিক্ষা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হলে ভেতরের অপবিত্রতা দূর করে মনকে ঈমান ও ভালোবাসার আলোয় আলোকিত করতে হবে।
হিংসা ও বিদ্বেষের ভয়াবহতা 
হিংসা হলো অন্যের ভালো কিছু দেখে তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কামনা করা। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হিংসাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:
“তোমরা হিংসা থেকে দূরে থাকো, কেননা হিংসা নেক কাজকে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।”- সুনানে আবি দাউদ, হাদীস নং: ৪৯০৩]
এই হাদীসটি মুমিনদের জন্য এক কঠিন সতর্কবার্তা। এটি প্রমাণ করে, দীর্ঘদিনের ইবাদত ও নেক আমলও এক মুহূর্তের হিংসার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে পারে।
 কুধারণা থেকে মুক্তি
অন্য মানুষের প্রতি খারাপ বা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করাকে ‘সু-এ-যান’ বলা হয়। এটি এমন একটি অভ্যাস যা সমাজে সন্দেহ ও অবিশ্বাস জন্ম দেয়। আল্লাহ মুমিনদেরকে এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন:

“হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান (ধারণা) করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কতক অনুমান পাপ এবং তোমরা কারও গোপনীয়তা অনুসন্ধান করো না.— সূরা হুজরাত (৪৯:১২)
এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ মুমিনদেরকে শিখিয়েছেন যে, কোনো নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়া কারো সম্পর্কে খারাপ ধারণা করা এক প্রকার পাপ। এর বিপরীতে, অন্যের জন্য ভালো ধারণা (হুসন আল-যান) পোষণ করা হলো আত্মিক পবিত্রতার চিহ্ন।
 আহলে বাইত (আঃ)-এর শিক্ষায় আত্মশুদ্ধি 
ইমামগণ (আঃ) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, অভ্যন্তরীণ অপবিত্রতা দূর করার প্রধান উপায় হলো তাওবা (ক্ষমা প্রার্থনা) এবং মুহাশাবা (আত্ম-পর্যালোচনা)।
এই পবিত্রতার অর্থ কেবল শারীরিক নয়, বরং হৃদয়ের পবিত্রতাও। ইমাম সাজ্জাদ (আঃ) তাঁর দোয়ার মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন, কীভাবে আল্লাহর কাছে মনের বিদ্বেষ, ঘৃণা ও রোগগুলো দূর করার জন্য প্রার্থনা করতে হয়।
আত্মিক পবিত্রতা হলো সেই ভিত, যার উপর মুমিনের সমস্ত ইবাদত নির্মিত হয়। বাহ্যিক ইবাদত কেবল তখনই আল্লাহর কাছে মূল্য পায়, যখন হৃদয় হিংসা, অহংকার এবং কুধারণার মতো পাপ থেকে মুক্ত থাকে। একজন মুমিনের উচিত, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রতিনিয়ত তাঁর হৃদয়কে ভালোবাসা, ক্ষমা এবং ভালো ধারণার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করা।

  ফজর/ ইয়াসিন মেহদী ( ইফাজ )

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?