মহান আল্লাহর মহাসৃষ্টি: পানি ও এর বার্তা

by Syed Yesin Mehedi

মহাকৌশলী আল্লাহর সৃষ্টিক‚লের পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অপার বিস্ময়ের নানা স্বাক্ষর। মহান আল্লাহর বিস্ময়কর অশেষ সৃষ্টির মধ্যে পানি অন্যতম। পানিই জীবনের অপর নাম। মানুষের জীবন ও জীবিকার অনেক মৌলিক দিকই পানির ওপর নির্ভরশীল। এই কারণে অতীতের বড় বড় সভ্যতাগুলো নদী তীরে গড়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, সিন্ধু নদী, নীল নদী এবং দজলা-ফোরাত নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বিশাল সভ্যতা।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সুরা আম্বিয়ার ৩০ নম্বর আয়াতে বলেছেন: “এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম।”
এ থেকে বোঝা যায়Ñপানিই জীবন্ত সব কিছুর উৎস। সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা ভ‚মি ও প্রকৃতি, উদ্ভিদ, ফুল-ফল, লতা-পাতা, নদ-নদী, সাগর, মৎসক‚ল ও অন্যান্য জলজ প্রাণীÑসবই পানির অবদান। মহান আল্লাহ পানি সৃষ্টি করেছেন এবং তা জীবনের উৎস ও সংরক্ষক। পানি সবকিছুকে পাক-সাফ বা পবিত্র করে।
সুরা ওয়াক্বিয়ার ৬৮-৭০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন: “তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন, না আমি বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লবণাক্ত করে দিতে পারি, এরপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?”
সুরা মুলক ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: “বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভ‚-গর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদের সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?”
পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, “আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর প্রশংসা করে।” নিঃসন্দেহে, পানিসহ সৃষ্টিক‚লের সব কিছু আল্লাহর প্রশংসা করে ও তাঁকে সম্মান করে।
পানি ও মানুষের অনুভুতি
সম্প্রতি জাপানের গবেষক অধ্যাপক মাসারু ইমোটো পানির অনু-পরমাণুর উপর মানুষের আবেগ ও শব্দের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি দেখেছেন, মানুষের চিন্তা, আবেগ, প্রার্থনা, সঙ্গীত ইত্যাদি পানির অনুগুলোকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি পানিকে “ভালবাসি” বলা হয়, বরফে পরিণত করলে তার অনুগুলো সুন্দর হয়ে ওঠে। আবার “ভালবাসি না” বলা হলে সেগুলো অগঠিত ও বিকৃত হয়ে যায়।
তিনি আরও দেখেছেন, ঝর্ণার পানি বা প্রবাহমান নদীর পানির স্ফটিক সুন্দর হয়, কিন্তু শিল্পাঞ্চল বা বাঁধের পেছনের পানির স্ফটিক এলোমেলো ও অসুন্দর হয়। যা প্রমাণ করে, পানিও পরিবেশ ও মানুষের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে।
পানি ও দোয়া
অধ্যাপক মাসারু ইমোটো দেখিয়েছেন, দোয়া ও প্রার্থনা পানির অনু-পরমাণুর উপর দ্রæত প্রভাব ফেলে। মুসলমানরা পানি পান, খাদ্য গ্রহণ বা ঘুমানোর আগে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” উচ্চারণ করে। এটি পানির স্ফটিককে সুন্দর ও সুগঠিত করে। ইসলামের এই বিধান পানির প্রভাব ও বরকতের সঙ্গে সম্পর্কিত।
জমজম কুয়া: পানির অলৌকিক নিদর্শন
পবিত্র কাবার পাশে অবস্থিত জমজম কুয়ার পানি সর্বাপেক্ষা পবিত্র। অধ্যাপক মাসারু ইমোটোর গবেষণায় দেখা গেছে, এই পানির স্ফটিক অন্যান্য পানির চেয়ে ভিন্ন এবং দীর্ঘকাল আবদ্ধ থাকলেও সুন্দরতা হারায় না। এক ফোটা জমজম সাধারণ পানিতে মেশালে সেটিও তার বৈশিষ্ট্য অর্জন করে।
ইসলামের নেতৃবৃন্দও জমজম পানির গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, “জমজমের পানি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ পানি। এটি দেহ-মনকে চাঙ্গা করে, রোগের চিকিৎসা সম্পন্ন এবং কখনো শুকায় না।”
পানির বার্তা ও মানব শিক্ষা
অধ্যাপক মাসারু ইমোটোর গবেষণা দেখায়, পানি ও অন্যান্য বস্তুর মধ্যেই ইতিবাচক শক্তি প্রয়োগ করলে তা আমাদেরও ইতিবাচক প্রভাবিত করে। যেমন পানির অসুন্দর স্ফটিক আবার সুন্দর হতে পারে, মানুষও আল্লাহর কাছে তওবা করে পাপমুক্ত ও সৎকর্মী হতে পারে।
কোরআন মজিদে উল্লেখ রয়েছে: “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী ও পবিত্রদের ভালবাসেন।” [সুরা বাকারা, আয়াত ২২২]
“যে গোনাহ থেকে তওবা করল, সে ব্যক্তি গোনাহ করেনি এমন ব্যক্তির সমান।” [হাদিস, নবী করীম (সাঃ)]
সব কাজের আগে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” উচ্চারণ করে আমরা আল্লাহর নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কৃতজ্ঞতা বরকত ও সুফল বাড়ায়, ইতিবাচক চিন্তা ও সদিচ্ছার জন্য বহু সওয়াব অর্জিত হয়।
অতএব, পানি আমাদের জীবনে কেবল জীবনদায়ক নয়, বরং আধ্যাত্মিক শিক্ষা, কৃতজ্ঞতা ও ইতিবাচক শক্তি বিকাশের মাধ্যম। পানির বার্তা আমাদের জীবন, সমাজ ও প্রকৃতিকে সুস্থ, সুন্দর, পবিত্র ও আনন্দময় করতে সাহায্য করে।

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?