কুরআন ও হাদীসের আলোকে হিংসা, লোভ ও অহংকার

by Syed Yesin Mehedi

মানুষের জীবন নৈতিক গুণাবলীর দ্বারা সমৃদ্ধ হয়, কিন্তু কিছু খারাপ গুণাবলী জীবনকে ব্যর্থ ও অশান্ত করে তোলে। হিংসা, লোভ ও অহংকার সেই ধরনের নৈতিক ত্রুটির মধ্যে অন্যতম। কোরআন ও হাদীস আমাদের সতর্ক করে যে, এই গুণাবলির দিকে আকৃষ্ট হলে ব্যক্তি এবং সমাজ দু’ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
হিংসা
হিংসা হলো অন্যের সাফল্য বা সুখ দেখে ঈর্ষা করা। ইসলামে হিংসুক ব্যক্তিকে নিন্দনীয় মনে করা হয়েছে। হিংসা শুধু ব্যক্তিকে দুঃখী করে না, বরং তার সামাজিক সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ইমাম আলী (আঃ) বলেন: “হিংসা ও বিদ্বেষকারী শোকার্ত হয়।” “হিংসা মানুষের কোনো উপকারে আসে না।”
কোরআনেও বলা হয়েছে: “এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।” (সূরা ফালাক: ৫।)
ইমাম বাকির (আঃ) বলেছেন: “যেভাবে আগুন কাঠকে ভক্ষণ করে, হিংসাও ঈমানকে ভক্ষণ করে।”
হিংসুকের চিহ্ন হলো পেছনে গীবত করা, সামনা-সামনি তোষামোদ করা, এবং অন্যের বিপদে আনন্দ পাওয়া। (আল-খেসাল, পৃষ্ঠা ১২১।)
হিংসা মানুষকে ঈমানের ক্ষতি দেয়, সমাজে অবিশ্বাস ও দূরত্ব সৃষ্টি করে। তাই মুসলমানকে সতর্ক থাকতে হবে এবং হিংসা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
লোভ
লোভ হলো অতিরিক্ত আকাক্সক্ষা, যা মানুষের মানসিক ও নৈতিক স্থিতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। লোভী ব্যক্তি কখনও আল্লাহর প্রদত্ত নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হয় না। তার চাহিদা সবসময় বাড়তে থাকে, যা চিরন্তন অপ্রসন্নতা ও মানসিক অসন্তুষ্টির কারণ হয়।
ইমাম সাদিক (আঃ) বলেন: “লোভী দুটি উৎকৃষ্ট গুণ থেকে বঞ্চিত হয়; ফলে সে প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি হারায়।”
ইমাম আলী (আঃ) বলেন: “যে ব্যক্তি লোভের বন্দি নয়, সে সর্বাপেক্ষা ধনী।”
মহানবী (সা.) বলেছেন: “ভয়, কৃপণতা ও লোভ একই প্রকারের, এবং তাদের মূল হল খারাপ ধারণা।”
মু’মিন ব্যক্তি কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট থাকে, তাই তার জীবন শান্তিপূর্ণ ও সুখময় হয়।
অহংকার
অহংকার বা আত্মমর্যাদা অতিরিক্ত উচ্চমানের ধারণা ব্যক্তিকে মানুষ ও আল্লাহর প্রতি অবজ্ঞাশীল করে তোলে। কুরআনে আল্লাহ বলেন: “যারা গর্ব করে, তারা সর্বদা নিচু হয়।” (সূরা লুকমান: ১৮।)
হাদীসে বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেছেন: “অহংকারী ব্যক্তি কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।” (সহীহ মুসলিম)
অহংকার মানুষকে নিজেকেই বিচ্ছিন্ন করে, সামাজিক সম্পর্ক ধ্বংস করে এবং ঈমানের ক্ষতি করে।
উপসংহার
হিংসা, লোভ ও অহংকার এই তিনটি গুণ মানুষকে নৈতিকভাবে দুর্বল করে এবং জীবনকে অশান্ত ও অপ্রসন্ন করে। কোরআন ও হাদীস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, এই খারাপ গুণাবলিকে পরিহার করতে হবে।
আমাদের করণীয়:
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ ও সন্তুষ্ট থাকা।
হিংসা ও লোভ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
অহংকার থেকে মুক্ত থাকা এবং বিনয়ী মনোভাব পালন করা।
নিয়মিত দোয়া এবং নৈতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি করা।
এই নৈতিক শিক্ষাগুলি মেনে চললে ব্যক্তি নিজের জীবনকে শান্তি, সুখ ও ঈমানের সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ করতে সক্ষম হয়।

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?