সংশোধনের সুযোগই প্রকৃত ন্যায়: ইমাম হাসান (আ.)-এর প্রজ্ঞা

by Syed Yesin Mehedi

মানবজীবনে সবাই কখনো না কখনো ভুল করে। ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত। কিন্তু সেই ভুলের পরও যদি সংশোধনের একটি রাস্তা খোলা থাকে, তবেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যায়, করুণা ও প্রকৃত ইসলামি আচরণ। ইসলামের শিক্ষা হলোÑএকটি ভুলকে কেন্দ্র করে দ্রæত প্রতিশোধ বা শাস্তি নয়, বরং সংশোধনের সুযোগ দেওয়া। এ বিষয়ে ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)-এর একটি প্রজ্ঞাপূর্ণ হাদীস আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে।
ইমাম হাসান (আ.)-এর প্রজ্ঞামূলক বাণী: “গোনাহের কারণে তাড়াহুড়া করে শাস্তি দিয়ো না; বরং শাস্তি দেওয়ার আগে ক্ষমা চাওয়ার একটি পথ খুলে দাও।” বিহারুল আনওয়ার, খন্ড ৭৮, পৃষ্ঠা ১১৫, হাদীস ১১
এই হাদীসে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি নীতি উঠে এসেছে:
১. তাড়াহুড়ার নিন্দা: মানুষ যখন কোনো অন্যায় দেখে, তখন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো সহজ এবং স্বাভাবিক মনে হয়। কিন্তু ইসলাম আমাদের আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। দ্রুত শাস্তি দেয়ার প্রবণতা কখনো কখনো ন্যায়ের চেয়ে প্রতিশোধ বা ক্রোধকে প্রাধান্য দিতে পারে। তাই ইমাম হাসান (আ.) বলছেনÑতাড়াহুড়া করে শাস্তি দিও না।
২. ক্ষমার পথ খোলা রাখা: সুদৃঢ় ন্যায়বিচারের পাশাপাশি ইসলাম করুণা ও অনুতাপকে উচ্চ মূল্য দেয়। আল্লাহ তাআলা নিজেও অনুতাপকারীকে ভালোবাসেন (তওবা ৯:১০৪)। তাই একজন অপরাধীকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া ন্যায়পরায়ণতারই অংশ।
৩. নৈতিক সমাজ গঠন: এই হাদীস ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য একটি নীতিমালা। যদি আমরা এই হাদীসের নির্দেশনা অনুসরণ করি, তবে সমাজ হবে সহানুভ‚তিশীল, ক্ষমাশীল ও উন্নয়নমুখী।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ইমাম হাসান মুজতবা (আ.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় ইমাম এবং রাসূল (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র। তিনি তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মুমিনদের রক্তপাত ও গৃহযুদ্ধ এড়ানোর জন্য মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান-এর সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন। অনেক সাহাবি তখন এটি ভুল সিদ্ধান্ত মনে করেছিলেন। কিন্তু ইমাম হাসান (আ.)-এর দৃষ্টিতে সমাজের কল্যাণ, রক্তপাত এড়ানো এবং সংশোধনের সুযোগ সৃষ্টি করা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এই হাদীস তাঁর চরিত্রেরই প্রতিচ্ছবি। তিনি কঠোরতার চেয়ে সহনশীলতা এবং প্রতিশোধের চেয়ে ক্ষমার নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
একটি ঘটনা তাঁর জীবন থেকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: যখন এক ব্যক্তি ইমাম হাসান (আ.)-কে প্রকাশ্যে গালমন্দ করে, তখন ইমাম (আ.) প্রতিক্রিয়া দেখানোর বদলে বলেন: “আমার মনে হয় আপনি পথভ্রষ্ট হয়েছেন। আপনি যদি কিছু চান, আমি তা দিতে প্রস্তুত।” লোকটি এতটাই লজ্জিত হয় যে পরে এসে ইমাম (আ.)-এর অনুসারী হয়ে যায়।
সমাপ্তি ও শিক্ষণীয় দিক: ইমাম হাসান (আ.)-এর এই হাদীস আমাদের শেখায় কঠোরতার আগে সহানুভ‚তি, বিচার করার আগে অনুতাপের সুযোগ দেওয়া ইসলামি নীতির অন্তর্ভুক্ত। এটি শুধু পারিবারিক বা ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থায়ও এক অনন্য নীতিমালা।
আজকের সমাজে, যেখানে দ্রুত রায় দেওয়া ও শাস্তি কার্যকরের প্রবণতা বাড়ছে, সেখানে এই হাদীস আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় মানবিকতা, ধৈর্য ও অনুতাপের মূল্যবোধই প্রকৃত ইসলামি ন্যায়বিচারের পথ। সূত্র: বিহারুল আনওয়ার

সম্পর্কযুক্ত পোস্ট

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Are you sure want to unlock this post?
Unlock left : 0
Are you sure want to cancel subscription?